💝💝টপ্পা গান💝💝
◆◆---সংগ্রাহক--ইউসুফ মোল্লা◆◆
আঙ্গিকগত খুঁটিনাটি বিষয় ছাড়া কবিগানের সঙ্গে টপ্পা গানের বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই।টপ্পা গানের বিশেষ উৎকর্ষ বিধান ও পরিনতিদানে রামনিধি গুপ্ত বা নিধুবাবুর নাম অবশ্য স্মর্তব্য। 'টপ্পা' শব্দের অর্থ 'লাফ'। আর এক অর্থে তা বোঝায় 'সংক্ষেপ'। অর্থাৎ ধ্রুপদ খেয়ালের সংক্ষিপ্ততর, তুলনায় লঘু সুরের গানই হলো 'টপ্পা'। কর্মোপলক্ষ্যে বিহারের ছাপরা জেলায় বসবাসের অভিজ্ঞতায় ও হিন্দুস্তানী সংগীত শিক্ষার তামিলকে কাজে লাগিয়ে নিধুবাবু বাংলা ভাষায় প্রণায়াশ্রিত, সৌন্দর্য পিপাসা ও দেহবাসনা নির্ভর টপ্পা গানের প্রবর্তন করেন।নিধুবাবুর পর শ্রীধর কথক, কালী মির্জা এবং বিশিষ্ট পক্ষীর দলের নেতা রূপচাঁদ পক্ষী প্রমুখ টপ্পা, কথকতা ও শ্যামা বিষয়ক গানের এই ধারাকে অগ্রসর করেছেন।
বাংলা টপ্পার আদি পুরুষ কালী মীর্জা। ১৭৮০-৮১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি সঙ্গীত শিক্ষা শেষে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি হুগলিতে এসে বসবাস শুরু করেন। এখানেই তিনি বাংলা টপ্পা গানের চর্চা শুরু করেন। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক ছিলেন। তিনি নিধুবাবুর অনেক আগে থেকে বাংলা টপ্পার প্রচলন করেন। উল্লেখ্য, ছাপরা থেকে কলকাতায় ফিরে নিধুবাবু বাংলা টপ্পা শুরু করেন ১৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দে। সময়ের নিরিখে বাংলা টপ্পার আদি পুরুষ বলতে কালী মির্জাকে বিবেচনা করা হয়। বাংলা টপ্পা জলপ্রিয়তা লাভ করেছিল রামনিধি গুপ্ত তথা নিধুবাবু'র সূত্রে। ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সরকারী রাজস্ব আদায় বিভাগে চাকরি লাভ করেন। এই বৎসরেই তিনি বিহারের ছাপরা জেলার কালেক্টর অফিসে দ্বিতীয় কেরানি হিসেবে কাজ শুরু করেন। ছাপরাতে তিনি প্রথম তিনি এক ওস্তাদের কাছে রাগ সঙ্গীতের তালিম নেওয়া শুরু করেন। পরে ছাপরা জেলার রতনপুরা গ্রামের ভিখন রামস্বামীর মন্ত্র শিষ্য হন। এই সময় তিনি উত্তরভারতের বিভিন্ন ধরনের গানের সাথে পরিচিত হয়ে উঠেন এবং বিভিন্ন সঙ্গীতশিল্পীদের কাছে রাগ সঙ্গীত শেখেন। এই সময় লক্ষ্ণৌ অঞ্চলে শোরী মিঞা'র টপ্পা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। বিভিন্ন শিল্পীদের মাধ্যমে তিনি সম্ভবত ওই টপ্পার সাথেও তাঁর পরিচয় ঘটেছিল। ১৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ছাপরা থেকে কলকাতায় ফিরে আসেন। কলকাতায় ফিরে তিনি শোভাবাজারে একটি আটচালা ঘরে সঙ্গীতের বসানো শুরু করেন। এই ঘরে প্রতিরাত্রে নিধুবাবু'র গানের আসর বসতো। এই আসরেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে টপ্পার সূচনা করেন তিনি। পরে এই আসরের আয়োজন হতো বাগবাজারের রসিকচাঁদ গোস্বামীর বাড়িতে। এই সকল আসরের ভিতর দিয়ে রামনিধি গুপ্ত-এর গান হয়ে যায় নিধুবাবু'র গান বা নিধুবাবু'র টপ্পা। কালী মীর্জা এবং নিধুবাবুর পরে বাংলা টপ্পাকে সচল রাখেন শ্রীধর কথক। শ্রীধর সযত্নে কালী মীর্জা এবং নিধুবাবুর টপ্পাকে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে তাঁর গানে নিধুবাবুর প্রভাবই বেশি। এরপর পশ্চিমা টপ্পা শিখে বাংলা টপ্পার জগতে আসেন মহেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। সঙ্গীতে তাঁর অসাধারণ দখলের কারণে তিনি মহেশ ওস্তাদ নামে খ্যত হয়েছিলেন। মহেশচন্দ্র ১৮৫০-১৯০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তাঁর বাংলা টপ্পাকে সজীব করে রেখেছিলেন।
টপ্পা গানের স্রষ্টা হিসাবে গোলাম নবীকেও দেখা হয়।
টপ্পা গানের প্রকৃত স্রষ্টা--শেরি মিঞা।
★★লিখেছেন---ইউসুফ মোল্লা★★
◆◆এডমিন, স্কুল শিক্ষক, পত্রিকা সম্পাদক, বিভিন্ন গ্রন্থের লেখক◆◆
গ্রন্থ ঋণ :
●বাঙ্গালির ভাষা ও সংস্কৃতি--একাদশ শ্রেণী
●কাব্য কবিতার ধারা--সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়
●সাহিত্যের ইতিহাস--অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
●কয়েকটি ইন্টারনেট পেজ
◆◆---সংগ্রাহক--ইউসুফ মোল্লা◆◆
আঙ্গিকগত খুঁটিনাটি বিষয় ছাড়া কবিগানের সঙ্গে টপ্পা গানের বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই।টপ্পা গানের বিশেষ উৎকর্ষ বিধান ও পরিনতিদানে রামনিধি গুপ্ত বা নিধুবাবুর নাম অবশ্য স্মর্তব্য। 'টপ্পা' শব্দের অর্থ 'লাফ'। আর এক অর্থে তা বোঝায় 'সংক্ষেপ'। অর্থাৎ ধ্রুপদ খেয়ালের সংক্ষিপ্ততর, তুলনায় লঘু সুরের গানই হলো 'টপ্পা'। কর্মোপলক্ষ্যে বিহারের ছাপরা জেলায় বসবাসের অভিজ্ঞতায় ও হিন্দুস্তানী সংগীত শিক্ষার তামিলকে কাজে লাগিয়ে নিধুবাবু বাংলা ভাষায় প্রণায়াশ্রিত, সৌন্দর্য পিপাসা ও দেহবাসনা নির্ভর টপ্পা গানের প্রবর্তন করেন।নিধুবাবুর পর শ্রীধর কথক, কালী মির্জা এবং বিশিষ্ট পক্ষীর দলের নেতা রূপচাঁদ পক্ষী প্রমুখ টপ্পা, কথকতা ও শ্যামা বিষয়ক গানের এই ধারাকে অগ্রসর করেছেন।
বাংলা টপ্পার আদি পুরুষ কালী মীর্জা। ১৭৮০-৮১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি সঙ্গীত শিক্ষা শেষে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি হুগলিতে এসে বসবাস শুরু করেন। এখানেই তিনি বাংলা টপ্পা গানের চর্চা শুরু করেন। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক ছিলেন। তিনি নিধুবাবুর অনেক আগে থেকে বাংলা টপ্পার প্রচলন করেন। উল্লেখ্য, ছাপরা থেকে কলকাতায় ফিরে নিধুবাবু বাংলা টপ্পা শুরু করেন ১৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দে। সময়ের নিরিখে বাংলা টপ্পার আদি পুরুষ বলতে কালী মির্জাকে বিবেচনা করা হয়। বাংলা টপ্পা জলপ্রিয়তা লাভ করেছিল রামনিধি গুপ্ত তথা নিধুবাবু'র সূত্রে। ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সরকারী রাজস্ব আদায় বিভাগে চাকরি লাভ করেন। এই বৎসরেই তিনি বিহারের ছাপরা জেলার কালেক্টর অফিসে দ্বিতীয় কেরানি হিসেবে কাজ শুরু করেন। ছাপরাতে তিনি প্রথম তিনি এক ওস্তাদের কাছে রাগ সঙ্গীতের তালিম নেওয়া শুরু করেন। পরে ছাপরা জেলার রতনপুরা গ্রামের ভিখন রামস্বামীর মন্ত্র শিষ্য হন। এই সময় তিনি উত্তরভারতের বিভিন্ন ধরনের গানের সাথে পরিচিত হয়ে উঠেন এবং বিভিন্ন সঙ্গীতশিল্পীদের কাছে রাগ সঙ্গীত শেখেন। এই সময় লক্ষ্ণৌ অঞ্চলে শোরী মিঞা'র টপ্পা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। বিভিন্ন শিল্পীদের মাধ্যমে তিনি সম্ভবত ওই টপ্পার সাথেও তাঁর পরিচয় ঘটেছিল। ১৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ছাপরা থেকে কলকাতায় ফিরে আসেন। কলকাতায় ফিরে তিনি শোভাবাজারে একটি আটচালা ঘরে সঙ্গীতের বসানো শুরু করেন। এই ঘরে প্রতিরাত্রে নিধুবাবু'র গানের আসর বসতো। এই আসরেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে টপ্পার সূচনা করেন তিনি। পরে এই আসরের আয়োজন হতো বাগবাজারের রসিকচাঁদ গোস্বামীর বাড়িতে। এই সকল আসরের ভিতর দিয়ে রামনিধি গুপ্ত-এর গান হয়ে যায় নিধুবাবু'র গান বা নিধুবাবু'র টপ্পা। কালী মীর্জা এবং নিধুবাবুর পরে বাংলা টপ্পাকে সচল রাখেন শ্রীধর কথক। শ্রীধর সযত্নে কালী মীর্জা এবং নিধুবাবুর টপ্পাকে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে তাঁর গানে নিধুবাবুর প্রভাবই বেশি। এরপর পশ্চিমা টপ্পা শিখে বাংলা টপ্পার জগতে আসেন মহেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। সঙ্গীতে তাঁর অসাধারণ দখলের কারণে তিনি মহেশ ওস্তাদ নামে খ্যত হয়েছিলেন। মহেশচন্দ্র ১৮৫০-১৯০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তাঁর বাংলা টপ্পাকে সজীব করে রেখেছিলেন।
টপ্পা গানের স্রষ্টা হিসাবে গোলাম নবীকেও দেখা হয়।
টপ্পা গানের প্রকৃত স্রষ্টা--শেরি মিঞা।
★★লিখেছেন---ইউসুফ মোল্লা★★
◆◆এডমিন, স্কুল শিক্ষক, পত্রিকা সম্পাদক, বিভিন্ন গ্রন্থের লেখক◆◆
গ্রন্থ ঋণ :
●বাঙ্গালির ভাষা ও সংস্কৃতি--একাদশ শ্রেণী
●কাব্য কবিতার ধারা--সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়
●সাহিত্যের ইতিহাস--অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
●কয়েকটি ইন্টারনেট পেজ
Comments
Post a Comment