Skip to main content

সাধু ও চলিত রীতি(ইউসুফ)

💝💝সাধু ও চলিত রীতি💝💝
---লিখছেন-◆◆ইউসুফ মোল্লা◆◆

★বাংলা ভাষার দু'টি রূপ দেখতে পাওয়া যায়। একটি সাধুভাষা, আর অপরটি কথ্যভাষা বা চলিত ভাষা। শুধু বাংলা নয়, পৃথিবীর শ্রেষ্ট শুদ্ধ ভাষাগুলিরও এই দুই রূপ দেখা যায়।

∆সাধুভাষা: মৌখিক ভাষার সংস্কারপূত রূপটিকে বলা হয় সাধুভাষা।
*শুধুমাত্র সাহিত্য রচনার প্রয়োজনে এই ভাষা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

★সাধু শব্দের অর্থ পবিত্র। রামমোহন রায় তার "বেদান্ত গ্রন্থ " -এ প্রথম সাধু শব্দটি ব্যবহার করেছেন  1915 সালে।

■একটি সাধুভাষার উদহারণ নিম্নে দেওয়া হলো----

"এই বলিয়া, আরব সেনাপতি, সাদর সম্ভাষণ ও করমর্দন পূর্বক, তাঁহাকে বিদায় দিলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ প্রস্থান করিলেন। আরব সেনাপতিও, সূর্যোদয়দর্শনমাত্র, অশ্বে আরোহন করিয়া, তদীয় অনুসরণে প্রবৃত্ত হইলেন।
                           (অদ্ভুত আতিথেয়তা/ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর)

----এবার এই উদাহরনের সাহায্যে সাধুভাষার কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নে দিয়ে দেওয়া হলো---

●তৎসম এবং অপ্রচলিত শব্দ ব্যবহারের প্রাবল্য।
যেমন-অশ্বে আরোহণ।

●এই রীতিতে বাক্য গঠন সবসময়ই নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে।

● ভাষার সাধু রূপে সমাসবদ্ধ পদ ব্যবহারের আধিক্য লক্ষ করা যায়।
যেমন-প্রবৃত্ত

● সাধু রীতিতে সর্বনাম এবং ক্রিয়াপদের পূর্ণরূপ ব্যবহৃত হয়।
যেমন-তাঁহাকে(সর্বনাম), করিলেন(ক্রিয়াপদ)।

● সাধু রীতিতে শব্দালংকার ও অর্থালংকারের প্রয়োগ বাহুল্য দেখা যায়।

● সাধু ভাষার আর এক বৈশিষ্ট্য গুরুগম্ভীর ভাব।

●বক্তৃতা ও নাটকের সংলাপের জন্য সাধুভাষা অনুপযোগী।

∆চলিত ভাষা বা কথ্য ভাষা: মৌখিক বা কথ্যভাষা শিষ্টজনের মুখে বিশেষ পরিবর্তন না হয়েও যখন কিছুটা মার্জিত রূপ লাভ করে এবং বর্তমানে সাহিত্যেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তাকে বলা হয় চলিত ভাষা বা শিষ্ট কথ্য ভাষা।

★চলিত ভাষার প্রবর্তক প্রাবন্ধিক প্রথম চৌধুরী(বীরবল)।

*প্রমথ চৌধুরী 1914 সালে সবুজ পত্র পত্রিকায় প্রথম চলিত ভাষা প্রয়োগ করেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ চলিত রীতিতে সাহিত্য রচনার মাধ্যমে চলিত ভাষাকে জনপ্রিয় করেন।রবীন্দ্রনাথের লেখা চলিত ভাষার প্রথম উপন্যাস "ঘরে-বাইরে"।

■একটি চলিত ভাষার উদহারণ নিম্নে দেওয়া হলো----

"আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি যে, যেদিকে যতদূর দৃষ্টি যায় সমগ্র আকাশ বর্ষায় ভরে গিয়েছে। মাথার উপর থেকে অবিরাম অবিরল অবিচ্ছিন্ন বৃষ্টির ধারা পড়ছে। সে ধারা এত সূক্ষ্ম নয় যে চোখ এড়িয়ে যায়, অথচ এত স্থূলও নয় যে তা চোখ জুড়ে থাকে।
                                            (বর্ষা/প্রমথ চৌধুরী)

----এবার এই উদাহরণের সাহায্যে চলিত ভাষার কিছু বৈশিষ্ট্য নিচে দিয়ে দিলাম--

●চলিত ভাষাতে অর্ধ তৎসম, তদ্ভব, দেশি এবং বিদেশি শব্দের প্রয়োগ অনেক বেশি।

●সমাসবদ্ধ পদের ব্যবহার এই রীতিতে অনেক কম। পরিবর্তে বাগধারা কিংবা প্রচলিত বাক্য বিন্যাসের প্রয়োগ বাহুল্য দেখা যায়।

●সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের সংক্ষিপ্ত রূপ চলিত বাংলায় ব্যবহার হয়।

●অনুসর্গ -এর ভিন্নরূপ চলিত বাংলায় প্রচলিত।
যেমন--সাধুরূপে: দ্বারা, হইতে, সহিত প্রভৃতি,
চলিত রূপে: দিয়ে, হতে, সঙ্গে প্রভৃতি।

●সাধু রীতিতে বাক্য বিন্যাসের যে নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে, তা চলিত রীতিতে অনেকটাই শিথিল এবং প্রায়ই তা পরিবর্তিত হয়।

◆রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছেন----

কোথায় গেলেন তোমার দাদা?
তোমার দাদা কোথায় গেলেন?
দাদা তোমার গেলেন কোথায়? ইত্যাদি।

■■সুতরাং সাধু ও চলিত রীতির আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে, এদের মৌলিক পার্থক্যগুলো নিচে দেওয়া হলো----

●●সর্বনামের পূর্ণাঙ্গ রূপ ব্যবহার হয়। যেমন--তাহাদের, কাহাকেও, যাহাদিগের ইত্যাদি।
●সর্বনামের প্রচলিত সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন-- তাদের, কাউকে, যাদের ইত্যাদি।

●●ক্রিয়াপদের সম্পূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট রূপগুলি প্রয়োগ করা হয়। যেমন--করিতেছে, বলিতেছিলেন, উঠিয়া ইত্যাদি।
●ক্রিয়াপদের সংক্ষিপ্ত ও একাধিক রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন-- করছে, বলছিলেন, উঠে>ওঠে ইত্যাদি।

●●অনুসর্গ-এর রূপগুলি চলিত রূপের থেকে পৃথক। যেমন-- হইয়া, চাইতে ইত্যাদি।
●অনুসর্গ-এর রূপগুলি সাধু রূপের থেকে ভিন্ন। যেমন--হয়ে, চেয়ে ইত্যাদি।

●●বাক্যবিন্যাসরীতি অনমনীয় ও সুনির্দিষ্ট।
●বাক্যবিন্যাস রীতি অনেক নমনীয় এবং ক্রিয়াটি বাক্যের ভেতরে চলে আসায় ভাষার গতি বৃদ্ধি পায়।

★★সাধু থেকে চলিত ভাষায় রূপান্তরের একটি উদাহরণ দেওয়া হলো---

●কিন্তু আমি আপনাকে যে অশ্ব দিয়াছি, উহা আমার অশ্ব অপেক্ষা কোনো অংশেই হীন নহে; যদি উহা দ্রুতবেগে গমন করিতে পারেন, তাহা হইলে আমাদের উভয়ের প্রানরক্ষার সম্ভাবনা।(সাধু রূপ)

● কিন্তু আমি আপনাকে যে ঘোড়া দিয়েছি, তা আমার ঘোড়ার থেকে কোনো অংশেই খারাপ নয়; যদি ও জোরে যেতে পারে, তা হলে আমাদের দু'জনের প্রাণে বাঁচার সম্ভাবনা।

◆গ্রন্থ ঋণ:◆

★বঙ্গভাষা ও সাহিত্য--দীনেশচন্দ্র সেন।
★ভাষার ইতিবৃত্ত--সুকুমার সেন।
★ভাষাবিজ্ঞান ও বাংলা ভাষা--ডঃ রামেশ্বর শ'।
★বাংলা ভাষাচর্চা--পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
★ভাষা-প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ--সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়।
★ভাষাবিদ্যা পরিচয়--পরেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য।

■আমার এই লেখাটা ভালো লাগলে যে কোনো জায়গায় শেয়ার করতে পারেন, কমেন্টও করতে পারেন নিচের বক্সে।■

**ইউসুফ মোল্লা**
গ্রুপ এডমিন, স্কুল শিক্ষক, পত্রিকা সম্পাদক, বিভিন্ন গ্রন্থ লেখক
24/10/2018

আমার ব্লগ--www. bengaliyousuf. blogspot. com
আমার youtrub--Yousuf Molla (subscrip করবেন)
আমার facebook--Yousuf Molla
আমাদের  facebook group----**পাঠাভ্যাস অধিবেশন-বাংলা বিভাগ**

Comments

Popular posts from this blog

লীলা মজুমদারের সম্পূর্ণ তথ্য

 লীলা মজুমদার - ইউসুফ   মোল্লা #আজ_সকাল_সকাল_চলে_এসেছি #লীলা_মজুমদার_নিয়ে  (ফেব্রুয়ারি ২৬, ১৯০৮ - এপ্রিল ৫, ২০০৭)         আমাদের দেশে ‘শতায়ু হও’ বলে আশীর্বাদ করা হয়ে থাকে। বাঙ্গালী লেখক-লেখিকাদের মধ্যে মাত্র দুজন এই একশ বছরের আয়ু স্পর্শ করেছেন বা স্পর্শ করার কাছাকাছি জায়গায় পৌঁছেছিলেন। তাঁরা হলেন - নীরদ চন্দ্র চৌধুরী এবং লীলা মজুমদার। তবে শত বর্ষের কাছাকাছি আয়ুতে পৌঁছালে অনেক ক্ষেত্রেই সুখের চেয়ে দুঃখ বেদনাই বেশী থাকে। নীরদ চন্দ্র চৌধুরী প্রায় পুরো সময়টাকেই লেখা পড়ার কাজে লাগিয়েছিলেন। লীলা মজুমদার শেষের প্রায় এক দশক বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। কিন্তু লীলা মজুমদার নিজের কর্মজীবনে এমন কিছু কালজয়ী সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন তা তাকে বাংলা সাহিত্যে অমর করে রেখেছে। বিশেষতঃ শিশু সাহিত্যে লীলা মজুমদার একটি অপ্রতিদ্বন্দী নাম। এখানে লীলা মজুমদারের পূর্ণাঙ্গ জীবন , তাঁর সাহিত্য কর্মগুলির আলোচনার সাথে সাথে তাঁর রচনা বৈশিষ্ট্য ও বর্তমান প্রজন্মে তাঁর প্রাসঙ্গিকতা ইত্যাদি বিষয়গুলির প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে।  ১৯০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ...

আশাপূর্ণা দেবীর সম্পূর্ণ তথ্য

আ শাপূর্ণা দেবী - ইউসুফ মোল্লা   #কথা_মতো_ভোর_ভোর_চলে_এসেছি #আশাপূর্ণা_দেবীকে_নিয়ে #জন্ম : ৮ ই জানুয়ারি ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর কলকাতায় মাতুলালয়ে। #পিতা : হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত। #মাতা : সরলাসুন্দরী দেবী। #আদি_নিবাস : হুগলি জেলার বেগমপুর। #জীবনসঙ্গী : কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা কালিদাস সেনগুপ্তের সঙ্গে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ১৫ বছর ৮ মাস বয়সে আশাপূর্ণা দেবীর বিবাহ হয়। #মৃত্যু : ১৩ ই জুলাই ১৯৯৫।         ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ১৩ বছর বয়সে ‘শিশুসাথী’ পত্রিকায় তাঁর প্রথম কবিতা “বাইরের ডাক” প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমে তিনি সাহিত্য জগতে আত্মপ্রকাশ করেন।        বড়োদের জন্য লেখা তাঁর প্রথম ছোটগল্প  “পত্নী ও প্রেয়সী”। এই ছোটগল্পটি ১৩৪৩ বঙ্গাব্দে শারদীয়া "আনন্দবাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত হয়।       আশাপূর্ণা দেবীর প্রথম প্রকাশিত ছোটগল্প "পাশাপাশি"।    ছোটদের জন্য লেখা তাঁর প্রথম ছোটগল্প সংকলন - “ছোট ঠাকুরদার কাশী যাত্রা” ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়।     বড়োদের জন্য লেখা প্রথম প্রকাশি...

🌸দশম শ্রেণীর উৎস সন্ধানে🌸

🕸দশম শ্রেণীর সাহিত্য সঞ্চয়ন,সাহিত্য সম্ভার ও কোনির সকল গ্রন্থের উৎস🕸 **সাহিত্য সঞ্চয়ন (দশম শ্রেণি)** ১)"শাবলতলার মাঠ" লেখক: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় । উৎস: বিভূতি রচনাবলী অষ্টম খন্ড । ২)"তিন পাহাড়ের কোলে" কবি: শক্তি চট্টোপাধ্যায় । উৎস: "অগ্রন্থিত পদ্য" (বাজার চলতি বই-এ লেখা "হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান") ৩)"জ্ঞানচক্ষু" লেখিকা : আশাপূর্ণা দেবী । উৎস : কুমকুম গল্প সংকলন। ৪)"বুধুয়ার পাখি" কবি : আলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত । উৎস : যৌবন বাউল । ৫)"অসুখী একজন" কবি :পাবলো নেরুদা । উৎস :বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে ।(পাবলো নেরুদার "Extravagaria" কাব্যের “La Desdichada”কবিতাটি নবারুণ ভট্টাচার্য "অসুখী একজন" নামে অনুবাদ করেন এবং অনূদিত " বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে" গ্রন্থে অন্তর্ভূক্ত হয়)। তরজমা : নবারুণ ভট্টাচার্য । ৬)"আমাকে দেখুন" লেখক :শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় । উৎস :'শ্রেষ্ঠ গল্পসংকলন'। পরে "শীর্ষেন্দুর সেরা ১০১" অন্তর্ভুক্ত হয়। ৭)"আয়...