বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (বনফুল)
-ইউসুফ মোল্লা( কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)
#জন্ম: ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জুলাই।
#জন্মস্থান: বিহারের পূর্ণিয়া জেলার মণিহারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বনফুলের পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল হুগলি জেলার শিয়ালখালায়।
#পিতা: সত্যচরণ মুখোপাধ্যায়। তিনি পূর্ণিয়া জেলার মণিহারী ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড হাসপাতালের ডাক্তার ছিলেন।
#মাতা: মৃণালিনী দেবী।
#ছোট ভাই: অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়
#ভ্রাতুষ্পুত্র: অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়
#স্ত্রী: লীলাবতী বন্দ্যোপাধ্যায়(মুখোপাধ্যায়)
#সন্তান:
#বড়োমেয়ে: কেয়া মুখোপাধ্যায়
#বড় ছেলে: অসীম মুখোপাধ্যায়
#ছোটছেলে: রঞ্জন মুখোপাধ্যায়
#ছোটমেয়ে: করবী মুখোপাধ্যায় (স্বামী: কাজলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের)
#মৃত্যু: ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ ফ্রেব্রুয়ারি কলকাতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
#ছদ্মনাম: বনফুল
#সম্পাদনা:
১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত 'বিকাশ' নামে হাতে-লেখা একটি সাহিত্য পত্রিকা।
#শিক্ষাজীবন:
তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় প্রথমে মণিহারী স্কুলে। পরে সাহেবগঞ্জ উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং এই স্কুল থেকে ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রবেশিকা (এন্ট্রান্স) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আই,এস,সি, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন হাজারীবাগ সেন্ট কলম্বাস কলেজ থেকে। একই বছরে তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। ইতিমধ্যে বিহারের পাটনায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিহার থেকে আসা ছাত্র হিসেবে তিনি এ নব প্রতিষ্ঠিত কলেজে স্থানান্তরিত হন এবং সেখান থেকে এমবিবিএস (১৯২৮) পাস করেন।
#কর্মজীবন:
তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল কলকাতার একটি বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে। পরে মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জের মিউনিসিপ্যালিটি হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার পদে কিছুকাল দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ভাগলপুরের খলিফাবাগে নিজ উদ্যোগে The Secro-Bactro Clinic নামে একটি ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করেন এবং এখানে তিনি খ্যাতিমান ডাক্তার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এরপর ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতায় চলে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
#সাহিত্যে_পদার্পন:
বনফুলের সাহিত্য জীবন শুরু হয়েছিল, ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে সাহেবগঞ্জ স্কুল থেকে প্রকাশিত 'মালঞ্চ' পত্রিকায় একটি কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে। এই পত্রিকাটি ছিল হাতে লেখা। এই পত্রিকাতেই তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল 'বনফুল' ছদ্মনামে।এরপর 'প্রবাসী'তে প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম ছোটগল্প "চোখ গেল"(১৩২৯ বঙ্গাব্দে) ।
তিনি সহস্রাধিক কবিতা, ৫৮৬টি ছোট গল্প, ৬০টি উপন্যাস, ৫টি নাটক, জীবনী ছাড়াও অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন।
তাঁর রচনাবলীসমগ্র ২২ খন্ডে প্রকাশিত।
#বনফুলের_সাহিত্যকর্ম:
#কাব্যগ্রন্থ:
১) বনফুলের কবিতা (১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দ),
২) অঙ্গারপণী (১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ),
৩) চতুর্দশী (১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ),
৪) আহ্বনীয় (১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দ),
৫) করকমলেষু (১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ),
৬) বনফুলের ব্যঙ্গ কবিতা (১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দ),
৭) নতুন বাঁকে (১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দ)।
#উপন্যাস:
১) তৃণখণ্ড (১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দ),
২) জঙ্গম (তিন খন্ড, ১৯৪৩-১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দ), (এক পুলিশ অফিসারের কাছে দেখা একটি প্যাকিং বাক্স, তাতে অপহৃতা এক গরীব নারীকে অজ্ঞান করে রাখা হয়েছে, এক দেশীয় মহারাজার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এই ঘটনা এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু)
৩) অগ্নি (১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দ),
৪) স্থাবর (১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দ),
৫) অগ্নীশ্বর (১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দ),
৬) ডানা (তিনখণ্ড, যথাক্রমে ১৯৪৮, ১৯৫০ ও ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দ)--আদিম মানবের ইতিহাস তথা তার নৃতত্ত্ব ভাবনা বিধৃত হয়েছে।
৭) হাটেবাজারে (১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দ)- ব্যক্তি অভিজ্ঞতা, জীবন অভিজ্ঞতা কিংবা জীবন বোধের পরিচয় আছে।
৮) ত্রিবর্ণ (১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ),
৯) ভুবন সোম (১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ),
১০)প্রচ্ছন্ন মহিমা (১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ),
১১)উদয় অস্ত (দুই খণ্ড ১৯৫৯ ও ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দ), (মায়ের মৃত্যুর পর ছেলে বনফুলের অনুরোধে সত্যচরণ জীবনচরিত লিখে রেখে গিয়েছিলেন। সেটিকে অবলম্বন করে এটি লেখা।)
১২)বৈতরণীর তীরে(১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ),
১৩)কিছুক্ষণ(১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ)--কলকাতার ভেসে চলা জীবন অভিজ্ঞতার কথা আছে।
১৪)সে ও আমি(১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ),
১৫)দ্বৈরথ(১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ),
১৬)মৃগয়া(১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ),
১৭)নির্মোক(১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ),
১৮)মানদন্ড(১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ),
১৯)নবদিগন্ত(১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ),
২০)কষ্টিপাথর,
২১)ভীমপলশ্রী,
২২)পঞ্চপর্ব,
২৩)লক্ষ্মীর আগমন,
২৪)নিরঞ্জনা(১৯৫৫),
২৬)মহারাণী(১৯৫৮),
২৭)মানসপুর(১৯৬৬),
২৮)এরাও আছে(১৯৭২),
২৯)নবীন দত্ত(১৯৭৪),
৩০)হরিশ্চন্দ্র(১৯৭৯) (তাঁর শেষ উপন্যাস) ,
৩১)সপ্তর্ষি(১৯৪৫),
৩২)গন্ধরাজ,
৩৩)পীতাম্বরের পুনর্জন্ম(১৯৬৩),
৩৪)নঞ তৎপুরুষ,
৩৫)কৃষ্ণপক্ষ,
৩৬)সন্ধিপূজা,
৩৭)কন্যাসু, (মেয়ের জন্য পাত্র খোঁজার বিষয় নিয়ে এটি লেখা।)
৩৮)অধিকলাল,
৩৯)গোপালদেবের স্বপ্ন,
৪০)স্বপ্নসম্ভব,
৪১)কষ্টিপাথর, (নববধূ লীলাবতী বিয়ের পরে পড়াশোনা শেষ করার জন্য বেথুন হস্টেলে থাকলে, তাঁকে উদ্দেশ্য করে নানা চিঠি, কবিতা এই উপন্যাসের বিষয়)
৪২)দুই পথিক,
৪৩)রাত্রি,
৪৪)পিতামহ(১৩৬১ বঙ্গাব্দ) - মিথ পুরাণের কথা আছে।
৪৫)পক্ষীমিথুন,
৪৬)তীর্থের কাক,
৪৭)রৌরব,
৪৮)জলতরঙ্গ,
৪৯)রূপকথা এবং তারপর,
৫০)প্রথম গরল,
৫১)রঙ্গতুরঙ্গ,
৫২)আশাবারি,
৫৩)সাত সমুদ্র তেরো নদী,
৫৪)আকাশবাসী,
৫৫)তুমি,
৫৬)অসংলগ্ন,
৫৭)সীমারেখা,
৫৮)অলংকারপুরী
#অনেক সমালোচক তাঁর উপন্যাসগুলোকে এইভাবে ভাগ করেছেন-
১।।কল্পনা ও কাব্যধর্মী :
১৯৩৫/তৃণখণ্ড।মৃগয়া/১৯৪০।ডানা/১৯৪৮।।লক্ষ্মীর আগমন/১৯৫৪ ।মানসপুর/১৯৬৬।অসংলগ্না/১৯৭৯। লী-১৯৭৮।
২।।সামাজিক :
বৈতরণীর তীরে/১৯৩৬।।কিছুক্ষণ/১৯৩৭। নির্মোক /১৯৪০। জঙ্গম/ ১৯৪৩-৪৫।উদয় অস্ত /১৯৫১।ভুবন সোম/১৯৫৭। জলতরঙ্গ /১৯৫৯। হাটেবাজারে /১৯৬১। জনাসু /১৯৬২। তীর্থের কাক /১৯৬৮। অধিককাল /১৯৬৯। রৌরব /১৯৭০। এরাও আছে /১৯৭২। নবীন দত্ত /১৯৭৪। হরিশ্চন্দ্র/১৯৭৯।
৩।।রাজনৈতিক :
সপ্তর্ষি/১৯৪৫। অগ্নি/ ১৯৪৬। স্বপ্নসম্ভব/১৯৪৭। মানদন্ড/ ১৯৪৮। প্রচ্ছন্ন মহিমা/১৯৫৩। ত্রিবর্ণ/১৯৬৩। তুমি/১৯৭১।
৪।।পুরানকেন্দ্রিক :
পিতামহ/১৯৫৪। রূপকথা ও তারপর /১৯৭০। সাত সমুদ্র তেরো নদী /১৯৭৬।
৫।।ইতিহাসাশ্রয়ী :
স্থাবর /১৯৫১। নিরঞ্জনা/১৯৫৫। গল্পবাজ /১৯৬৬। ।গোপালদেবের স্বপ্ন /১৯৬৮। কষ্টিপাথর/১৯৭১ সন্ধিপূজা/১৯৭২।প্রথম গরল/১৯৭৪।
৬।।মনস্তাত্ত্বিক :
রাত্রি/১৯৪১। সে ও আমি/১৯৪২।পক্ষীমিথুন/১৯৬৪।কৃষ্ণপক্ষ/১৯৭২।
৭।।চিকিৎসক জীবন :
অগ্নীশ্বর /১৯৫৯।বৈতরণীর তীরে। উদয়- অস্ত। হাতেবাজারে। নির্মোক।
৮।।বিচিত্র সমস্যা নির্ভর:
দ্বৈরথ/১৯৩৭। নঞতৎপুরুষ/১৯৪৬। ভীমপলশ্রী /১৯৪৯। ।নবদিগন্ত/১৯৪৯।পঞ্চপর্ব /১৯৫৫। বিষম জ্বর /১৯৫৫। উজ্জ্বলা/১৯৫৫। মহারাণী/১৯৫৮ দুই পথিক/১৯৬০।ওরা সব পারে/১৯৬০। সীমারেখা/১৯৬২।পীতাম্বরের পুনর্জন্ম/১৯৬৩।গ্নধ্রাজ/১৯৬৬। রঙ্গতুরঙ্গ/১৯৭০।আশাবরী/১৯৭৪।অলকাপুরী/১৯৭৮।
#গল্পগ্রন্থ:
১) বনফুলের গল্প (১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দ),
২) বনফুলের আরো গল্প (১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ),
৩) বাহুল্য (১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ),
৪) বিন্দু বিসর্গ (১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দ),
৫)অদৃশ্যলোকে (১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দ),
৬) আরো কয়েকটি (১৯৪৭),
৭) তন্বী (১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ),
৮) নবমঞ্জুরী(১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ),
৯) ঊর্মিমালা (১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ),
১০) রঙ্গনা (১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ),
১১)অনুগামিনী (১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দ),
১২) করবী(১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ),
১৩) সপ্তমী (১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ),
১৪)দূরবীণ (১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দ),
১৫)মণিহারী (১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ),
১৬) ছিটমহল (১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ),
১৭) এক ঝাঁক খঞ্জন (১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ),
১৮)বহুবর্ণ (১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ) ,
১৯)বনফুলের নতুন গল্প (১৯৭৬)।
#নাটক:
১) কঞ্চি (১৯৪৫) - সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক।
২) রূপান্তর (১৯৩৮)
৩) মধ্যবিত্ত (১৯৪৩)
৪) ত্রিনয়ন(১৯৪৬)
#জীবনী_নাটক:
১) শ্রীমধুসূদন(১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ),
২) বিদ্যাসাগর(১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ) ।
#প্রবন্ধ:
১) শিক্ষার ভিত্তি (১৯৫৫) - সমকালীন শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে লেখা।
২) দ্বিজেন্দ্রদর্পন(১৯৬৭) - দ্বিজেন্দ্রলাল রায় সম্পর্কে স্মারক বক্তৃতা।
৩) ভূয়োদর্শন(১৯৪২) -কমলাকান্তের ভঙ্গিতে লেখা।
#ডায়রি_জাতীয়_রচনা:
১) রবীন্দ্র স্মৃতি (১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ),
২) মর্জিমহল(১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ)।
#আত্মজীবন:
১) পশ্চাৎপট (১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ)।
#অভিভাষণের_গ্রন্থ:
১) উত্তর (১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ),
২) মনন(১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ),
৩) ভাষণ(১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ),
#ছোটদের_জন্য:
১) মায়াকানন (১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ),
২) রাজা(১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ)।
#প্রহসন:
১) মন্ত্রমুগ্ধ(১৯৩৮)
বাংলা সাহিত্যে সর্বপ্রথম অণুগল্প লেখেন বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়।
পোস্টকার্ড স্টোরির জনক। এধরনের গল্পকে কেউ বলেছেন ‘Five Minutes’। বুদ্ধদেব বসু এ ধরণের গল্পকে বলেছেন ‘এক চুমুক’।
তিনি কিছু ইংরেজি উপন্যাস অনুবাদ করেন, যা দেশজ পটভূমি ও চরিত্রের বিন্যাসে অলংকৃত।
তিনি বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনচরিত অবলম্বন করে নাটক রচনায় অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন।
তাঁর কয়েকটি উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িত হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য "ভূবনসোম", " হাটে বাজারে ", " অগ্নীশ্বর "।
#সাহিত্য_সাধনার_স্বীকৃতি:
১)শরৎস্মৃতি পুরস্কার (১৯৫১),
২) রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৬২),
৩)বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক (১৯৬৭) লাভ করেন,
৪)১৯৭৩ খরিষ্টাব্দে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিলিট উপাধি প্রদান করে,
৫)১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারত সরকারের কাছ থেকে পদ্মভূষণ উপাধি পান।
বনফুল তখন বিহারের সাহেবগঞ্জ রেলওয়ে হাইস্কুলের ছাত্র। সেই সময়ে ‘বিকাশ’ নামে হাতে লেখা পত্রিকায় কবিতা লেখালিখি চলত। পরে ‘মালঞ্চ’ পত্রিকায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা ছাপা হল। সকলেই খুশি। শুধু এক জন বাদে। স্কুলের হেডপণ্ডিত রামচন্দ্র ঝা।
পণ্ডিতমশাইয়ের ধারণা, সংস্কৃতে বলাই একশো পাওয়ার যোগ্য। পাচ্ছেন না ওই কবিতার কারণে। তাই নির্দেশ, ‘কবিতা লেখা চলবে না’। মহা ফাঁপরে পড়ল কিশোর বনফুল। উপায় বাতলালেন অগ্রজস্থানীয় সুধাংশুশেখর মজুমদার। সেই ছদ্মনাম নেওয়া ‘বনফুল’। কিন্তু ছদ্মনামে লিখেও শেষ রক্ষা হল না। ধরা পড়েই গেলেন পণ্ডিতমশাইয়ের কাছে।
‘নির্দেশ অমান্য কেন?’ জানতে চাইলেন পণ্ডিতমশাই। বলাইয়ের জবাব, ‘না লিখে পারি না যে’! এ বার আর পণ্ডিতমশাই বাধা দিলেন না। তবে কয়েকটা ‘টাস্ক’ দিলেন, কিছু সংস্কৃত শ্লোক অনুবাদ করার। ‘প্রবাসী’ ও ‘ভারতী’-তে তা ছাপাও হল। কবিতা লিখেও অবশ্য ১৯১৮-য় বনফুল ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন প্রথম বিভাগেই, স্কুলের মধ্যে প্রথম হয়ে।
কিন্তু এত কিছু নাম থাকতে বনফুল ছদ্মনাম কেন, সে প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক। এ কথার জবাব নিজেই দিয়েছেন বনফুল, ‘বন চিরকালই আমার নিকট রহস্য নিকেতন। এই জন্যই বোধহয় ছদ্মনাম নির্বাচন করিবার সময় ‘‘বনফুল’’ নামটা আমি ঠিক করিলাম।’
(পরিমল গোস্বামী ও বনফুল।)
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের 'পারাপার' উপন্যাস পড়ে বনফুল চিঠি লেখেন। যেখানে লেখা ছিল, "তোমার এই উপন্যাসে কোনও বে-দাগ চরিত্র পেলাম না। "
বনফুলের ‘মানুষের মন’ গল্পটি পড়ে ভারী খুশি হয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। চাইলেন, অনুজ লেখককে কিছু একটা উপহার দিতে। বনফুলের আবদার, উপহার হিসেবে গুরুদেবের গায়ে দেওয়া একটি পুরনো জামা। রবীন্দ্রনাথ কিছুতেই দেবেন না। বনফুলও নাছোড়। শেষমেশ এক দিকে দামি পশম, অন্য দিকে রেশম দেওয়া একটি প্রকাণ্ড জোব্বা উপহার মিলল।
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মতান্তরও ঘটেছে। বনফুলের ‘তৃণখণ্ড’-য় কিছু কবিতা রয়েছে। সেগুলি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের মতামত, ‘ডাক্তারের ক্লিনিকে ওরা ভান করা সৌখিন রোগী’। বনফুলের ‘শ্রীমধুসূদন’ নাটকের কিছু অংশও রবীন্দ্রনাথের পছন্দ হয়নি। বদলানোর পরামর্শ দিলেও, বনফুল তা করেননি।
দিনটা রবিবার। বনফুল গিয়েছেন এক জনের বাড়ি। বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই প্রশ্ন, দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধ কবে হয়েছিল? নিরুত্তর বনফুল। তা দেখে সেই গৃহকর্তা বললেন, ‘বিজ্ঞানের ছাত্র বলে দেশের ইতিহাস জানবে না!’ শেষমেশ ওই বাড়ির গ্রন্থাগারে বসেই ঈশানচন্দ্র ঘোষের লেখা ইতিহাসের বই পড়া শেষ করে তবে মিলল মুক্তি।
যাঁর সঙ্গে বনফুলের এই অভিজ্ঞতা, তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়।
এই সময়পর্বেই আলাপ শিশির ভাদুড়ীর সঙ্গেও। তিনি বনফুলকে আরব্য উপন্যাস বা কোনও সামাজিক বিষয়ে নাটক লেখার পরামর্শ দেন। পরবর্তী সময়ে বনফুলের ‘শ্রীমধুসূদন’ প্রকাশের পরে শিশিরবাবু স্বয়ং ভোরের ট্রেনে ভাগলপুর এসে জানান, ‘আপনার শ্রীমধুসূদন অভিনয় করব।’ যদিও তা হয়ে ওঠেনি।
এক খ্যাতনামা চিকিৎসক তথা ভারতের বিশিষ্ট এক রাজনীতিবিদ দেশের কোনও জরুরি সমস্যা বা দেশের মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরি করা যাবে, এমন কোনও বিষয় নিয়ে নাটক লিখতে বললেন বনফুলকে। যদিও তা তিনি লিখতে পারেননি। অনুরোধটা করেছিলেন বিধানচন্দ্র রায়।
তাঁর লেখা শেষ উপন্যাস ‘হরিশচন্দ্র’-তে হয়তো তাই আপন ‘মর্জিমহল’-এর বাসিন্দা বনফুল বাঙালিকে বলে গিয়েছেন, ‘আমি আর ফিরব না। তোমরা যন্ত্র সভ্যতার বিলাসে সুখে থাক।
@আনন্দবাজারের সাংবাদিক এক সাক্ষাতকারে "বনফুল" কে প্রশ্ন করছিলেন - ' অনেক পুরস্কার তো পেয়েছেন, কোনটিকে জীবনের সেরা পুরস্কার বলে মনে করেন ?
" বনফুল " কিঞ্চিৎ ভেবে বললেন --- ' সে অর্থে আমার জীবনের সেরা পুরস্কার কিন্তু অন্যরকম !! '
---- ' একটু খুলে যদি বলেন ........! '
----' দেখুন .... ভাগলপুর রেল স্টেশনের দিকে একপ্রকার দৌড়েই যাচ্ছি , সাথে কুলি আছে --- কলকাতা যাবার বিশেষ তাগিদে ....
রেল স্টেশনে পৌঁছনোর আগেই দেখি -- ট্রেন ছেড়ে দিল --- !!!! '
এবারে ট্রেন পরদিন । কি করবো ভেবে পাচ্ছি না ! এদিকে না গেলেই নয় ! এই রকম অবস্থায় হাঁপাতে হাঁপাতে কোনরকমে স্টেশনের ভিতরে একটা বেঞ্চে বসে পড়লাম।ভাবছি ---- কি করা যায় !
কিছুক্ষণ পরেই দেখি --- যে প্লাটফর্ম থেকে ট্রেনটি ( কলকাতা যাবার ) ছেড়ে চলে গেল এইমাত্র ... ওই প্লাটফর্মেই পিছন দিক থেকে একটা ট্রেন ব্যাক করে আসছে ! ট্রেন দাঁড়ালো ---- !!
অনেকেই হৈ চৈ করছেন । এক ভদ্রলোক আমার সামনে এসে বললেন ---- " স্যার আমি আপনাকে চিনি ডাক্তার হিসেবে তো বটেই , কিন্তু তার থেকেও বেশী করে চিনি কারন আপনার সব কটি লেখাই আমার পড়া । "
----- " আপনাকে দৌড়াতে দেখেই বুঝতে পেরেছি .... কলকাতা যাবার গাড়ী ধরতে আসছেন । আমিই ...... স্যার এই ট্রেনের ড্রাইভার । তাই আপনার জন্যই গাড়ী ব্যাক করে নিয়ে এলাম । চলুন --- স্যার তাড়াতাড়ি চড়ুন !!! "
---- "" একজন ট্রেন চালক রেল গাড়ী ব্যাক করে আমাকে ট্রেনে তুলে , তারপর আবার সামনের দিকে চলতে শুরু করে । ""
এর চাইতে বড় পুরস্কার কি হতে পারে ?
**বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সাল পাওয়ার জন্য গ্রন্থের সাল গুলো সঠিকভাবে জেনে নেবেন।
#তথ্য_সংগ্রহ:
১) বনফুল- প্রশান্তকুমার দাশগুপ্ত
২) কথাকোবিদ বনফুল- নিশীথ মুখোপাধ্যায়
৩) বনফুলের মর্জিমহল- আনন্দবাজার পত্রিকা
৪) কোরক সাহিত্য পত্রিকা
৫) স্মৃতিচিত্রণ- পরিমল গোস্বামী
৬) উইকিপিডিয়া, বিকাশপিডিয়া
৭) বিভিন্ন ব্লগ
৮) ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পেজ
৯) বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান-চরিতাভিধান-সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম
১০) বঙ্গসাহিত্যাভিধান- হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য।
দারুণ
ReplyDeleteউনার কোন কাজ কি ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে কিনা কেউ বলতে পারেন?
ReplyDeleteA nice case study
ReplyDeleteতথ্য গুলো পিডিএফ আকারে দিলে ভালো হয়
ReplyDeleteপেজের লিংক টাকে কপি করুন, তারপর google এ গিয়ে ওয়েব পেজ টু পিডিএফ লিখে সার্চ করুন এবং যেকোনো একটি লিংকে ক্লিক করে এই লিংকটি পেস্ট করে ওয়েব পেজটির পিডিএফ বানিয়ে নিন।
Delete