Skip to main content

সমরেশ বসুর সম্পূর্ণ তথ্য

সমরেশ বসু

- ইউসুফ মোল্লা
#জন্ম: ১১ই ডিসেম্বর, ১৯২৪ সালে ঢাকার বিক্রমপুরে ।

 #পিতৃদত্ত_নাম(প্রকৃত নাম) : সুরথনাথ বসু

 #পিতা : মোহিনীমোহন বসু

 #মাতা : শৈবালিনী দেবী

 #স্ত্রী : গৌরী দেবী

 #ছদ্মনাম :  “কালকূট” এবং “ভ্রমর”

 #মৃত্যু : ১৯৮৮ সালের ১২ই মার্চ কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে।

    সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে “আনন্দ পুরষ্কার” লাভ করেন।

    কালকূট ছদ্মনামে লেখা  “শাম্ব”(১৯৭৮) উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে “সাহিত্য আকাদেমি” পুরষ্কার লাভ করেন।

     তাঁর প্রথম ছোটগল্প “আদাব” ১৯৪৬ সালে শারদীয়া “পরিচয়” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এটিই তাঁর প্রথম রচনা ।

    তাঁর রচিত প্রথম উপন্যাস “নয়নপুরের মাটি” ১৯৪৬ সালে রচনা করেন, কিন্তু প্রকাশিত হয় ১৯৫২ সালে।

     তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস “উত্তরঙ্গ” ১৯৫১ সালে প্রকাশিত হয় 'দেশ' পত্রিকায়।

   তাঁর সর্বশেষ উপন্যাস “দেখি নাই ফিরে” যা তিনি সমাপ্ত করতে পারেননি। এটি শিল্পী রামকিঙ্কর বেইজকে নিয়ে লেখা। তিনি উপন্যাসটি ধারাবাহিক 'দেশ'  পত্রিকায় লিখতে শুরু করেছিলেন । পাঁচটি পর্বের নামকরণও করেছিলেন এই রকম, ‘আরক্ত ভোর’, ‘সকালের ডাক— বিশ্বঅঙ্গনে’, ‘রৌদ্রদগ্ধ দীর্ঘ বেলা’, ‘ছায়া দীর্ঘতর’ এবং ‘অন্ধকারের আলো’। রামকিঙ্করের জীবনের গতি ও চলন অনুযায়ী ওই নামকরণ ও পর্বভাগ। পরে অবশ্য অসমাপ্ত অবস্থায় 'আনন্দ পাবলিশার্স' থেকে গ্রন্থাগারে প্রকাশিত হয়।

      ছোটদের জন্য সৃষ্ট গোয়েন্দা #গোগোল অত্যন্ত জনপ্রিয়। এর ২টি কাহিনি চলচ্চিত্রায়িত হয়।

  'গঙ্গা'(১৯৫৭) উপন্যাসটি তারাশঙ্কর উৎসর্গ করেন।

   'শ্রীচৈতন্য' উপন্যাসটি চৈতন্যদেবের জীবনকে কেন্দ্র করে লেখা।

     কালকূট ছদ্মনামে লেখা 'কোথায় পাব তারে' উপন্যাসটি লালন ফকিরের জীবন নিয়ে লেখা।

     'সেই মুখ'(১৯৫৬) উপন্যাসটি অলৌকিক ঘটনা নিয়ে লেখা ।

     কালকূট ছদ্মনামে লেখা 'অমৃতকুম্ভের সন্ধানে'(১৯৫৪) উপন্যাসটি বিখ্যাত ভ্রমণ মূলক উপন্যাস।
   
            তাঁর উপন্যাসের সংখ্যা ১০০ টি আর ছোটগল্পের সংখ্যা ২০০ টি।

   #উপন্যাস

১) 'নয়ন পুরের মাটি' (১৯৪৬)
২) 'উত্তরঙ্গ' (১৯৫১)
৩) 'বিটি রোডের ধারে' (১৯৫২)
৪) 'শ্রীমতি কাফে' (১৯৫৩)
৫)'অমৃতকুম্ভের সন্ধানে' (১৯৫৪)
৬) 'সওদাগর' (১৯৫৫)
৭) 'সেই মুখ' (১৯৫৬)
৮) 'গঙ্গা' (১৯৫৭)
৯) 'ত্রিধারা' (১৯৫৭)
১০) 'পুতুল খেলা' (১৯৫৮)
১১) 'দুরন্ত চড়াই' (১৯৫৮)
১২) 'বাঘিনী' (১৯৬০)
১৩)'খুজে ফিরি সেই মানুষে' (১৯৬০)
১৪)'হারায়ে সেই মানুষে'(১৯৬২)
১৫) 'ফেরাই' (১৯৬৪)
১৬) 'শালবেরির সীমানায়' (১৯৬৪)
১৭) 'বিবর' (১৯৬৫)
১৮)'স্বর্ণশিখর প্রাঙ্গনে' (১৯৬৫)
১৯) 'জগদ্দল' (১৯৬৬)
২০) 'স্বীকারোক্তি' (১৯৬৭)
২১) 'প্রজাপতি' (১৯৬৭)
২২) 'পাতক' (১৯৬৯)
২৩) 'মানুষ' (১৯৭০)
২৪) 'যাত্রিক' (১৯৭০)
২৫) 'অবচেতন' (১৯৭০)
২৬) 'বিশ্বাস' (১৯৭১)
২৭) 'ওদের বলতে দাও' (১৯৭২)
২৮) 'ছায়া ঢাকা মন' (১৯৭২)
২৯) 'পথিক' (১৯৭৩)
৩০) 'পরম রতন' (১৯৭৩)
৩১) 'প্রাচীর' (১৯৭৪)
৩২) 'বিজড়িত' (১৯৭৫)
৩৩) 'সংকট' (১৯৭৬)
৩৪) 'মহাকালের রথের ঘোড়া' (১৯৭৭)
৩৫) 'গন্তব্য' (১৯৭৮)
৩৬) 'শাম্ব' (১৯৭৮)
৩৭) 'বিপর্যস্ত' (১৯৮০)
৩৮) 'টানাপোড়েন' (১৯৮০)
৩৯) 'বিজন বিভূঁই' (১৯৮১)
৪০) 'যুগ যুগ জীয়ে' (১৯৮১)
৪১) 'পুনর্যাত্রা' (১৯৮২)
৪২) 'সেকল ছেঁড়া হাতের খোঁজ' (১৯৮৪)
৪৩) 'তিন পুরুষ' (১৯৮৬)
৪৪) 'প্রথা' (১৯৮৬)
৪৫) 'দেখি নাই ফিরে'
৪৬) 'কোথায় পাব তারে'
৪৭) 'নির্জন সৈকতে'
৪৮) 'অমৃত বিষের পাত্রে'
৪৯) 'মন মেরামতের আশায়'
৫০) 'হারায়ে সেই মানুষে'
৫১) 'তুষার শৃঙ্গের পদতলে'
৫২) 'যুদ্ধের শেষ সেনাপতি'
৫৩) 'ক্যালকাটা ৭১'
৫৪) 'কিতাব'
৫৫) 'নামকিন'
৫৬) 'গুলজার শৌখিন'
৫৭) 'পাড়'
৫৮) 'গেনেসিস'
৫৯) 'উত্তরা'
৬০) 'নাটের গুরু'
৬১) 'আম মাহাতো'
৬২) 'কামনা বাসনা'
৬৩) 'কে নেবে মোরে'
৬৪) 'খন্ডিতা'
৬৫) 'জবাব'
৬৬) 'দাহ'
৬৭) 'নিঠুর দরদী'
৬৮) 'বাঘিনী'
৬৯) 'বিদেশী গাড়িতে বিপদ'
৭০) 'বিবেকবান'/'ভীরু'
৭১) 'ভানুমতী ও ভানুমতীর নবরঙ্গ'
৭২) 'রক্তিম বসন্ত'
৭৩) 'শিমুলগড়ের খুনে ভূত'
৭৪) 'শেখল ছেঁড়া হাতের খোঁজে'
৭৫) 'সেই গাড়ির খোঁজে'
৭৬) 'স্বর্ণচঞ্চু'
৭৭) 'হৃদয়ের মুখ'
৭৮) 'শ্রীচৈতন্য'

    #'কালকূট' ছদ্মনামে লেখা গ্রন্থ :
১) 'অমৃতকুম্ভের সন্ধানে' (১৯৫৪)
২) 'খুজে ফিরি সেই মানুষে' (১৯৬০)
৩) 'স্বর্ণশিখর প্রাঙ্গনে' (১৯৬৫)
৪) 'শাম্ব' (১৯৭৮)
৫) 'অমৃত বিষের পাত্রে'
৬) 'মন মেরামতের আশায়'
৭) 'হারায়ে সেই মানুষে'
৮) 'তুষার শৃঙ্গের পদতলে'
৯) 'নির্জন সৈকতে'
১০) 'বানীধ্বনি বেনুবনে'
১১) 'কোথায় পাবো তারে'
১২) 'স্বর্ণশিখর প্রাঙ্গনে'
১৩) 'অতিথি'
১৪) 'প্রাচেতস'

   #'ভ্রমর' ছদ্মনামে লেখা গ্রন্থ :
১) 'প্রথা' (১৯৮৬)
২) 'যুদ্ধের শেষ সেনাপতি'
৩) 'অন্তিম প্রনয়'
৪)  'আরব সাগরের জল নোনা'
৫) 'প্রেম কাব্যরক্ত'
৬) 'জ্যোতির্ময়ী'
৭) 'শ্রীচৈতন্য'
৮) 'ধানজ্ঞান প্রেম'
৯) 'পিঞ্জর অচিন পাখি'
১০) 'পূর্ণভূমে গঙ্গাস্নান'
১১) 'যে খোজে আপন ঘরে'
১২) 'পূর্ণকুম্ভ পুনশ্চ'
১৩) 'মন চলে বনে'
১৪) 'বনের সঙ্গে খেলা'
১৫) 'প্রেম নামে বন'


  #ছোটোদের_জন্য_লেখা_গ্রন্থ ('গোগোল অমনিবাস') :
১) 'বুনো হাতি'র বন্ধুত্ব' [শারদীয়া 'আনন্দমেলা', ১৯৭৭]
২) 'জোনাকি ভূতের বাড়ি' [শারদীয়া 'আনন্দমেলা', ১৯৮০]
৩) 'গোগোল কোথায়?' [শারদীয়া 'আনন্দমেলা', ১৯৮১]
৪) 'অদৃশ্য মানুষের হাতছানি' [শারদীয়া 'শুকতারা', ১৯৮৬]
৫) 'টেলিফোন আড়িপাতার বিপদ' [শারদীয়া 'শুকতারা']
৬) 'আয়না নিয়ে খেলতে খেলতে'
৭) 'চোরা হাতা শিকারী'
৮) 'দুর্গের গড়খায় দুর্ঘটনা'
৯) 'গরাধীন জানালায় রাক্ষস'
১০) 'গোগোলের কেরামতি'
১১) 'গোগোলের রয়রাজা উদ্ধার'
১২) 'হারানো বুদ্ধগুপ্তী'
১৩) 'ইঁদুরের খুট খুট'
১৪) 'কৈরং মঠ এর গোগোলের কান্ড'
১৫) 'মহিষমর্দিনী উদ্ধার'
১৬) 'পশ্চিমের ব্যালকনি থেকে'
১৭) 'রাজধানী এক্সপ্রেসের হত্যা রহস্য'
১৮) 'রত্ন রহস্য ও গোগোল'
১৯) 'সোনালি পাড়ের রহস্য'
২০) 'জঙ্গলমহলের গোগোল'
২১) 'গোগোল চিক্কুস নাগাল্যান্ডে'
২২) 'চোরাহাতী শিকারী'

   #গল্পগ্রন্থ :

১. অকালবৃষ্টি (১৯৫৩)

২. পশারিণী (১৯৫৫)

৩. ষষ্ঠ ঋতু (১৯৫৬)

৪. মনোমুকুর (১৯৫৮)

৫. দেওয়াল লিপি (১৯৫৯)

৬. পাহাড়ী ঢল (১৯৬১)

৭. উজান (১৯৬৬)

৮. বনলতা (১৯৬৭)

৯. ছেঁড়া তমসু (১৯৭১)

১০. চেতনার অন্ধকার (১৯৭২)

১১. ধর্ষিতা (১৯৭২)

১২. নাচঘর (১৯৭৬)

১৩. মাসের প্রথম রবিবার (১৯৭৮)

১৪. আমি তোমাদেরই লোক (১৯৮৬)


উপন্যাস/গল্প কেন্দ্রীক #চলচ্চিত্র নির্মাণ :
১) 'নির্জন সৈকতে' (১৯৬৩) : পরিচালক তপন সিংহ।
২) 'ক্যালকাটা ৭১' (১৯৭২) : পরিচালক মৃণাল সেন
৩) 'কিতাব' (১৯৭৭) : পরিচালক বসু চট্টোপাধ্যায়।
৪) 'নামকিন' (১৯৮২) : পরিচালক বসু চট্টোপাধ্যায়।
৫) 'গুলজার শৌখিন' (১৯৮২) : পরিচালক বসু চট্টোপাধ্যায়।
৬) 'অমৃত কুম্ভের সন্ধানে' (১৯৮২) : পরিচালক দিলীপ রায়।
৭) 'পাড়' (১৯৮৪) : পরিচালক গৌতম ঘোষ।
৮) 'গেনেসিস' (১৯৮৬) : পরিচালক মৃণাল সেন।
৯) 'উত্তরা' (২০০০) : পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত।
১০) 'নাটের গুরু' (২০০৩) : পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী।
১১) 'বিবর' (২০০৬) : পরিচালক সুব্রত সেন।
১২) 'সোনালী পাড়ের রহস্য' নামক 'গোগোল অমনিবাস'কে কেন্দ্র করে 'গোয়েন্দা গোগোল' (২০১৩) নামে সিনেমা নির্মিত হয়। এর পরিচালক হলেন অরিন্দম দে। ক্ষুদে অভিনেতা অহিজিৎ ঘোষ গোগোলের চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া অভিনয় করেছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, সাহেব চট্টোপাধ্যায়, রুনা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখেরা।
১৩) 'গোয়েন্দা গোগোল'-এর মতো 'গোগোল অমনিবাস'কে কেন্দ্র করে 'গোগোলের কীর্তি' (২০১৪) সিনেমাটি নির্মিত হয়। এর পরিচালক হলেন পম্পি ঘোষ মুখোপাধ্যায়। সিনেমাটি নির্মিত হয় সমরেশ বসুর 'গোগোল অমনিবাস'-এর দুটি গল্পকে কেন্দ্র করে। সেগুলি হল --- 'গোগোলের রয়রাজা উদ্ধার' ও 'মহিষমর্দিনী উদ্ধার'। 'গোয়েন্দা গোগোল' সিনেমার মতো এই সিনেমাতেও ক্ষুদে অভিনেতা অহিজিৎ ঘোষ গোগোল চরিত্রে অভিনয় করেন।

   তাঁর পুত্র নবকুমার বসু 'চিরসখা' নামের প্রায় ৫ লক্ষ শব্দের বিশাল উপন্যাসের মাধ্যমে তাঁর লেখক হিসাবে যে লড়াই তা স্মরণীয় করে রেখেছেন ।

    গল্প রচনায় তিনি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুসারী ছিলেন।

       ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ইছাপুরের গান ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। ট্রেড ইউনিয়ন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। এই কারণে তাঁকে ১৯৪৯-৫০ খ্রিস্টাব্দে জেলও খাটতে হয়, জেলখানায় বসে তিনি তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘উত্তরঙ্গ’ (১৯৫১) রচনা করেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।

     স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে অকৃতকার্য হলে বাড়ি থেকে তিনি নির্বাসিত হয়।

     “টানাপোড়েন” উপন্যাসটি তিনি বিষ্ণুপুরের​ বিখ্যাত শিল্পী অক্ষয়কুমার পাটরাঙ্গার শিল্প ও তাঁর সাধনা সমরেশ বসুকে এই উপন্যাস লেখার প্রেরণা দেয়।

     “বিবর”(১৯৬৭) উপন্যাসটি শারদীয় ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রথম ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। পরে ১৯৬৭ সালে গ্রন্থাকারে​ প্রকাশিত হয়।

    এক সময় মাথায় ফেরি করে ডিম বেচতেন।

      দেবেশ রায় তাঁর মৃত্যুতে লেখা রচনাটির শিরোনামই দিয়েছিলেন, 'জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি লেখক এবং পেশাদার লেখক' (প্রতিক্ষণ, ৫ম বর্ষ, ১৭ সংখ্যা)

     বাংলাসাহিত্যে এখন পর্যন্ত একটি উপন্যাসেরই নাম করা যায় যেটি  নিম্ন আদালত কর্তৃক অশ্লীলতার দায়ে নিষিদ্ধ থাকার পর সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে দীর্ঘ ১৭ বছর পর মুক্তি পায়। সমরেশ বসুর ‘প্রজাপতি’র কথা বলছি। ইতোমধ্যে বইটি এক ঐতিহাসিক মর্যাদা লাভ করেছে।

      কথিত অশ্লীলতার দায়ে নিষিদ্ধ হলেও বইটির প্রধান বৈশিষ্ঠ্য এর ব্যতিক্রমী গদ্যশৈলী। ১৩৭৪ বঙ্গাব্দের (ঐক্যে১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ) ‘দেশ’ শারদীয় সংখ্যায় যখন নাতিদীর্ঘ এ উপন্যাসটি বেরোয় সমসাময়িককালে কিংবা তারও আগে এরকম উজ্জ্বল গদ্যের উদাহরণ আর দ্বিতীয়টি নেই।



      মূলত সমরেশের প্রথাবিরোধী দুঃসাহসিক গদ্য তাকে বাংলা কথাসাহিত্যের জগতে এক ব্যতিক্রমী আসন দিয়েছে। এক অসা ধারণ স্বাতন্ত্র্যে দীপ্যমান তার গদ্যশৈলী। তিনি প্রচলিত গদ্যরীতিকে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে নূতন এক গদ্যের জনক হয়েছেন। যে গদ্য অন্য কারও সঙ্গেই মেলে না। এমনকি তার নিজের বইয়েও একটির থেকে আরেকটির ভাষাশৈলী স্বতন্ত্র। তার উপন্যাস এবং ছোটগল্পের বিষয়বস্তুও আর দশজন কথাশিল্পী থেকে ভিন্ন। মধ্যবিত্ত হয়েও মধ্যবিত্তের ভন্ডামি, নোংরামি, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতার স্বরুপ উদঘাটন করেছেন তিনি তার সাহিত্যে। তার তীব্র গদ্যের চাবুকে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে মেকি, অন্তঃসারশূণ্য, ক’পমন্ডূক মধ্যবিত্ত চরিত্র। উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার শিল্পাঞ্চলের শিল্প-শ্রমিকেরা যেমন তার লেখার উপজীব্য হয়েছে (তিনি নিজেও প্রথম জীবনে ঐ এলাকায় শিল্প-শ্রমিকদের মাঝে ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী ছিলেন) তেমনি পাশাপাশি এসেছে গঙ্গাপাড়ের জেলেরা। ‘পদ্মা নদীর মাঝি’,‘তিতাস একটি নদীর নাম’ এদুটো কালজয়ী উপন্যাসের পাশে স্থান করে নিয়েছে সমরেশ বসুর ‘গঙ্গা’।



      সমরেশের ‘পাতক’, ‘প্রজাপতি’,‘ বিবর’,‘ স্বীকারোক্তি’, ‘অপদার্থ’ এ পাঁচটি উপন্যাস সম্পর্কে বার বার অশ্লীলতার অভিযোগ উঠেছে। এ উপন্যাসগুলো যারা পড়েছেন তারা জানেন দুঃসাহসিক কাহিনীর প্রয়োজনেই এসব উপন্যাসে যৌনতা এসেছে। এসব উপন্যাসে যৌনতা কখনও কাহিনীকে অতিক্রম করেনি। ‘প্রজাপতি’ উপন্যাসের নায়ক সুখেন প্রচলিত ধারার রাজনীতির ধারক-বাহকদের হাতের পুতুল। প্রচলিত ধারার রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থা সুখেনকে জন্মদাতা পিতা ও শিক্ষকের প্রতিও বীতশ্রদ্ধ করে তুলে। নারীপ্রেমে তার আজন্ম সন্দেহ। এহেন সুখেন সম্পর্কে অন্যত্র সমরেশ বসু বলেন, ‘আমি সুখেনের স্রষ্টা নই। পাঠকরা চিন্তাশীল অনুসন্ধিৎসু মানুষ। সুখেনের স্রষ্টাদের আপনারা নিশ্চয়ই চিনে নিবেন। আমি সুখেনের অন্যতর এক সত্তার সন্ধানী মাত্র। যে সত্তার মধ্যে ছিল প্রেম ও উত্তরণের আর্তি।’ (‘প্রজাপতি’, আমার কথা, সমরেশ বসু, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা ১৯৮৯)।



      ‘সুচাঁদের স্বদেশযাত্রা’, ‘যুগ যুগ জীয়ে’,‘ মহাকালের রথের ঘোড়া’, ‘শেকল ছেঁড়া হাতের খোঁজে’, ‘বাঘিনী ’,‘শাম্ব ’,‘বিটি রোডের ধারে’, ‘শ্রীমতি কাফে’,‘ বিপর্যস্ত’,‘ টানাপোড়েন ’ ’ইত্যাদি উপন্যাসে তিনি তার গদ্যরীতির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। একটি উপন্যাসের ভাষাশৈলী তিনি পরবর্তী উপন্যাসে বর্জন করেছেন।



        ভিন্ন স্বাদের লেখায় সমরেশ ভিন্ন নামের আশ্রয় নিয়েছেন। ‘কালকূট’ ছদ্মনামে লেখা তার উপন্যাস ‘অমৃত কুম্ভের সন্ধানে’ বিপুল পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। ‘চলো মন রুপনগরে’, ‘মুক্তবেণীর উজানে ’ইত্যাদি গ্রন্থ একাধারে উপন্যাস ও ভ্রমণকাহিনী। এক অভিনব গদ্যশৈলীতে এসব লেখার বিষয়বস্তুও ভিন্নস্বাদের। বাউল আর সাধু-সন্ন্যাসীদের নিয়ে এসব লেখা বাংলাসাহিত্যে এক আশ্চর্য সংযোজন।



        সমরেশের বেশ কিছু ছোটগল্প ও উপন্যাসের কাহিনী  অবলম্বনে বাংলা ও হিন্দিতে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এক্ষেত্রে নাসিরউদ্দিন শাহ্ ও শাবানা আজমী অভিনীত ‘পার’ চলচ্চিত্রটির নাম করা যায়। তার ছোটগল্পের তীব্র জীবনবাদিতা কোন কোন ক্ষেত্রে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ছাড়িয়ে গেছে।



      বাংলা কথাসাহিত্যে সমরেশ বসুর তুলনা সমরেশ বসুই। তিনি জন্মেছিলেন ঢাকা জেলার ঐতিহ্যবাহী বিক্রমপুরের রাজানগর গ্রামে। জন্ম ১১ ডিসেম্বর ১৯২৪ খ্র্স্টিাব্দ। আর এ পরিশ্রমী লেখক ১৯৮৮-এর ১২ মার্চ যখন মারা যান তখনও তার লেখার টেবিলে ১০ বছরের অমানুষিক শ্রমের অসমাপ্ত ফসল শিল্পী রামকিংকর বেইজের জীবনী অবলম্বনে উপন্যাস ‘দেখি নাই ফিরে ’।

#তথ্যসূত্রঃ
১.‘প্রজাপতি’,‘আমার কথা ’,সমরেশ বসু, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা ১৯৮৯।
২.‘সমরেশ বসু, দুঃসহ সময়ের রুপকার’,তাজুল ইসলাম ফিরোজী, ‘জনকন্ঠ’১০ ডিসেম্বর ১৯৯৩।
৩. ‘দেশ ’, সমরেশ বসু স্মরণ সংখ্যা, কলকাতা ১৯৮৮।
৪.বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান, ঢাকা ১৯৯৭।
৫.আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস- তপন কুমার চট্টোপাধ্যায়
৬.অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
৭.আনন্দবাজার পত্রিকা-১৫ জুলাই, ২০১৭
৮.সমরেশ বসু মহাকালের রথের ঘোড়া- কানাইলাল মন্ডল
৯.মহাকালের রথের ঘোড়া-ব্যর্থ বিপ্লবের অব্যর্থ বাণীরূপ- অমিয় দত্ত
১০. বিভিন্ন ব্লগ
১১. উইকিপিডিয়া ও ওয়েব সাইটের বিভিন্ন পেজ

Comments

  1. খুব সুন্দর, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

লীলা মজুমদারের সম্পূর্ণ তথ্য

 লীলা মজুমদার - ইউসুফ   মোল্লা #আজ_সকাল_সকাল_চলে_এসেছি #লীলা_মজুমদার_নিয়ে  (ফেব্রুয়ারি ২৬, ১৯০৮ - এপ্রিল ৫, ২০০৭)         আমাদের দেশে ‘শতায়ু হও’ বলে আশীর্বাদ করা হয়ে থাকে। বাঙ্গালী লেখক-লেখিকাদের মধ্যে মাত্র দুজন এই একশ বছরের আয়ু স্পর্শ করেছেন বা স্পর্শ করার কাছাকাছি জায়গায় পৌঁছেছিলেন। তাঁরা হলেন - নীরদ চন্দ্র চৌধুরী এবং লীলা মজুমদার। তবে শত বর্ষের কাছাকাছি আয়ুতে পৌঁছালে অনেক ক্ষেত্রেই সুখের চেয়ে দুঃখ বেদনাই বেশী থাকে। নীরদ চন্দ্র চৌধুরী প্রায় পুরো সময়টাকেই লেখা পড়ার কাজে লাগিয়েছিলেন। লীলা মজুমদার শেষের প্রায় এক দশক বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। কিন্তু লীলা মজুমদার নিজের কর্মজীবনে এমন কিছু কালজয়ী সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন তা তাকে বাংলা সাহিত্যে অমর করে রেখেছে। বিশেষতঃ শিশু সাহিত্যে লীলা মজুমদার একটি অপ্রতিদ্বন্দী নাম। এখানে লীলা মজুমদারের পূর্ণাঙ্গ জীবন , তাঁর সাহিত্য কর্মগুলির আলোচনার সাথে সাথে তাঁর রচনা বৈশিষ্ট্য ও বর্তমান প্রজন্মে তাঁর প্রাসঙ্গিকতা ইত্যাদি বিষয়গুলির প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে।  ১৯০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ...

আশাপূর্ণা দেবীর সম্পূর্ণ তথ্য

আ শাপূর্ণা দেবী - ইউসুফ মোল্লা   #কথা_মতো_ভোর_ভোর_চলে_এসেছি #আশাপূর্ণা_দেবীকে_নিয়ে #জন্ম : ৮ ই জানুয়ারি ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর কলকাতায় মাতুলালয়ে। #পিতা : হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত। #মাতা : সরলাসুন্দরী দেবী। #আদি_নিবাস : হুগলি জেলার বেগমপুর। #জীবনসঙ্গী : কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা কালিদাস সেনগুপ্তের সঙ্গে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ১৫ বছর ৮ মাস বয়সে আশাপূর্ণা দেবীর বিবাহ হয়। #মৃত্যু : ১৩ ই জুলাই ১৯৯৫।         ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ১৩ বছর বয়সে ‘শিশুসাথী’ পত্রিকায় তাঁর প্রথম কবিতা “বাইরের ডাক” প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমে তিনি সাহিত্য জগতে আত্মপ্রকাশ করেন।        বড়োদের জন্য লেখা তাঁর প্রথম ছোটগল্প  “পত্নী ও প্রেয়সী”। এই ছোটগল্পটি ১৩৪৩ বঙ্গাব্দে শারদীয়া "আনন্দবাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত হয়।       আশাপূর্ণা দেবীর প্রথম প্রকাশিত ছোটগল্প "পাশাপাশি"।    ছোটদের জন্য লেখা তাঁর প্রথম ছোটগল্প সংকলন - “ছোট ঠাকুরদার কাশী যাত্রা” ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়।     বড়োদের জন্য লেখা প্রথম প্রকাশি...

নবম শ্রেণীর উৎস সন্ধানে

∆সকল গল্প,কবিতা,নাটক,প্রবন্ধের উৎস নির্দেশ∆ #নবম_শ্রেণীর_সাহিত্যসঞ্চয়ন_সাহিত্যসম্ভার_ও_প্রফেসর_শঙ্কুর_ডায়রি **সাহিত্য সঞ্চয়ন নবম শ্রেণী** ১."কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি" কবি - মুকুন্দরাম চক্রবর্তী । উৎস : চন্ডীমঙ্গল কাব্যের আখেটিক খন্ড তথা কালকেতুর উপাখ্যান অন্তর্ভুক্ত "কলিঙ্গ দেশে ঝড়বৃষ্টি আরম্ভ"। ২."ধীবর বৃত্তান্ত" লেখক - কালিদাস । উৎস :অভিজ্ঞান শকুন্তলা নাটকের ষষ্ঠ অঙ্ক ।  তর্জমা : সত্যনারায়ণ চক্রবর্তী । ৩."ইলিয়াস" লেখক : লিও টলস্টয় উৎস : Twenty Three Tales (১৮৮৫) তর্জমা :মণীন্দ্র দত্ত । ৪."সাত ভাই চম্পা" কবি : বিষ্ণু দে । উৎস : সাত ভাই চম্পা । ৫."দাম" লেখক : নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় উৎস : ১৩৬৫ বঙ্গাব্দে শারদীয়া "তরুণের স্বপ্ন" তে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল । ৬."এই জীবন" কবি : সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় । উৎস : "দেখা হলো ভালোবাসা বেদনায়" । ৭."নব নব সৃষ্টি" লেখক : সৈয়দ মুজতবা আলী । উৎস : এটি "মাম্ দোর পুনর্জন্ম" প্রবন্ধের সম্পাদিত অংশ । মূল ...