🌺প্রথম বাংলা অভিধানের সন্ধানে 🌺

🍁ধান ভানতে শিবের গীত🍁

🌻প্রথম_বাংলা_অভিধান🌻
✒কলমে- সুব্রত লাহা (এম. এ. বাংলা) 
বর্তমানে SRMS vidyapith-HS স্কুলের Group C পদে কর্মরত। 
শখ- নতুন নতুন তথ্য জানা ও সংগ্রহ করা। তাই নিজেকে "শখের পড়ুয়া" বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। 
বাস করেন- Bakshi

        বিষয়টা অনেকটা ধান ভানতে শিবের গীত এর মতোই হয়ে গেল। উত্তর খুঁজছিলাম রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ এর বঙ্গভাষাভিধান প্রথম বাংলা অভিধান কি না, কিন্তু এ কেঁচো খুঁড়তে কেউটের আমদানি। বিষ টুকু আমার, অমৃত এর ভাঁড় তুলেদিলাম আপনাদের হাতে ।

বাংলা অভিধান – শব্দ বন্ধটিতে একথা টি পরিস্কার যে এটি বাংলা শব্দের অভিধান । এখন অভিধান কী? এবং সেই কর্মপ্রচেষ্টার শুরু কার হাতে? এই প্রশ্নের সমাধান খুঁজব বাকি আপনারা স্বয়ং বিচার করুন।

অভিধান কথার বুৎপত্তিগত অর্থ হল অভি-ধা+অন , অর্থাৎ যার দ্বারা বা যার মধ্যে অর্থ যথার্থরূপে প্রকাশ পায় । তাই শব্দার্থ প্রকাশক গ্রন্থকে অভিধান বলা হয় (প্রশ্ন ১। প্রকাশিত অর্থ কী অন্য ভাষায় হলে অভিধান বলা যাবে না? যদি যায় তাহলে।।)

অভিধান এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হিসেবে Dictionary, Glossary, Vocabulary শব্দগুলি ব্যাবহার করা হয়। অন্যদিকে বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে কোষগ্রন্থ শব্দ টি ব্যবহার করা হয়। তবে ‘কোষ’ শব্দবন্ধটি র সাথে অভিধান শব্দের অভিধায় প্রভেদ একটু বেশি । কোষ এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হিসেবে Dictionary বা Thesaurus কখনও যোগ্যতা লাভ করতে পারে না। ইংরেজি Encyclopedia র সাথে কোষগ্রন্থ এর মিল সর্বাধিক বা প্রকারান্তরে একই।

🍂অভিধান ও কোষগ্রন্থ এর পার্থক্যঃ

কোষ কথাটির বুৎপত্তি হোল কুষ+অ অর্থাৎ যা থেকে সুগন্ধ নির্গত হয়। আর যে বৃত্তি বা শক্তিদ্বারা শব্দার্থের জ্ঞান হয় বা যার দ্বারা শব্দার্থের জ্ঞান সম্যকরূপে প্রকাশপায় তাকে অভিধান বলে।

শব্দের অর্থ বৈচিত্র্য , প্রয়োগ নমুনা, বুৎপত্তি, উচ্চারন ইত্যাদির আলোচনা অভিধানের বিষয়। অন্যদিকে কোষগ্রন্থের আলোচ্য বিষয় কেবলই শব্দকেন্দ্রিক নয় , তা বহু ব্যাপক ও বিস্তৃত। জ্ঞান বিজ্ঞানের সকলক্ষেত্রে তথ্য ও তত্ত্বের যে বিপুল সমাবেশ তার পরিচয় দেওয়া কোষগ্রন্থের মূলউদ্দেশ্য।

‘ভারতকোষ’ গ্রন্থের মুখবন্ধে কোষগ্রন্থের বিশিষ্টতা সম্পর্কে বলা হয়েছে “ কোষগ্রন্থের কাজই হল বিশ্ববিদ্যার সারাংশ সংকলন করিয়া উহা সুবিন্যস্তভাবে পরিবাশন করা। .........বিগত শতাব্দির জ্ঞানচর্যা যেন অনাগত যুগের প্রয়োজনে লাগে , উত্তর পুরুষ যেন আমাদের অপেক্ষা জ্ঞানী হইয়া আমাদের অধিক সৎ ও সুখী হইতে পারেন। ইহাই সকল কোষগ্রন্থের মর্মবানী”( খেয়াল করুন চিন্তার স্তর কোন পর্যায়ে থাকলে এমন বলা যায়, এমন লেখা যায়)
তবে অভিধান আর শব্দকোষ শব্দদুটি যে একই বস্তুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তার সবচেয়ে বড়ো প্রমান কাজী আবদুল ওদুদ এর অভিধানখানির আখ্যাপত্র –‘ব্যবহারিক শব্দকোষ / বাংলা ভাষার অভিনব অভিধান’।

অন্যান্য সব ক্ষেত্রের মতো অভিধান বা কোষগ্রন্থ এর সংকলনে ভারত তথা বিশ্বের প্রথম নিদর্শন সংস্কৃত(বৈদিক) । খৃষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে রচিত ‘নিঘন্টু’ ই প্রথম অভিধান বা শব্দকোষ। যাস্ক এর ভাষ্য ‘নিরুক্ত’ রচনা করেন ( অনেকের মতএ যাস্ক ই নিঘন্টু আর নিরুক্ত এর রচনাকার)
নিঘন্টু হল বৈদিক শব্দাবলীর সমার্থক বা ভিন্নার্থক ক্রমে বিন্যস্ত শব্দসংকলন । একটি বস্তুর যতগুলি নাম হতে পারে তার সংকলন নিঘন্টু।

নিরুক্ত হল নিঘন্টুতে সংকলিত শব্দগুলির বুৎপত্তি প্রদর্শন।
নিঘন্টু ও নিরুক্ত পরবর্তীতে সংস্কৃত , প্রাকৃত, পালি প্রভৃতি ভাষায় অনেক শব্দসংকলন বা অভিধান সংকলিত হয় উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত(শব্দকল্পদ্রুম – রাধাকান্ত দেব) । তবে সবচেয়ে আলোচিত ও কার্যকরী অভিধান টি প্রথম সংকলন করেন অমর সিংহ, নবম শতাব্দী বা তার পূর্ববর্তীকালে , নাম – নামলিঙ্গানুশাষন যা অমরকোষ নামে চিহ্নিত। এই অমরকোষ এর সাথে আমাদের বাঙালির অভিধান বা শব্দ সংকলনের যোগ আছে।

🍂বাংলা অভিধানঃ

বাংলা অভিধান সংকলন বাংলা ব্যকরন এর মতোই বিদেশিদের প্রয়োজনে বিদেশিদের হাতে বিদেশিদের মতো করে সংকলিত অভিধান। কেবল মাত্র প্রশাষনিক ও ধর্মীয় কাজের সুবিধার জন্য বাংলা গদ্যের তথা বাংলা ব্যকরন সহ অভিধানের জন্মদাতা ইউরোপীয় যাজকগন। তবুও এক্ষেত্রে আমরা একজন বাঙালি র নাম পাই যার হাতে বাংলা শব্দ সংকলিত হয়েছিল কিন্তু আভিধানিক অভিধান নির্মিত হয় নি। আমরা বাংলা অভিধানের জন্ম ও কৈশর লগ্নের তথ্যগুলো দেখার চেষ্টা করব।

#দ্বাদশ শতাব্দীতে সংকলিত বন্দঘটী সর্বানন্দ বা সর্বানন্দ বন্দোপাধ্যায় এর ‘টীকা সর্বসত্ত্ব’ (অমরকোষের টীকা) তে প্রাপ্ত বাংলা শব্দ সংগ্রহ বাংলা শব্দ সংকলনের প্রথম প্রয়াস। প্রায় তিনশতাধিক বাংলা শব্দ এতে সংকলিত। কিন্তু এটি শব্দসংকলনের প্রথম প্রয়াসই মাত্র । সংস্কৃত অভিধান অমরকোষের টিকা তে বাংলা প্রতিশব্দের সংকলন মাত্র।
#এর পরে আসে মনোএল । মনোএলের বই Vocabulario Em Idioma Bengalla e Portuguez Dividido em Duas Partes. এর নাম করন থেকেই পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে যে এটি মূলত একটি শব্দ সংকলন। ১৭৪৩ এ ছাপা এই বইয়ের ৪৯ থেকে ৩০৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বাংলা পোর্তুগীজ অভিধান এবং ৩০৭ থেকে ৫৭৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পোর্তুগীজ বাংলা অভিধান। এই সংকলনের সবচেয়ে বড়ো বৈশিষ্ট্য এখানে সংকলিত শব্দগুলি বর্ণানুক্রমিক(কেবল প্রথম বর্ণ।)
#সর্বানন্দ এবং মনোএল এর মাঝ খানে একটি মিসিং লিঙ্ক এর খবর পাওয়া যায় । ১৬৮৩ খৃষ্টাব্দে ফাদার সাঁতুচ্চির লেখা একখানি চিঠি তে একটি অভিধান সংকলনের সংবাদ আছে । ফাদার লিখছেন “ The fathers have not failed in their duty: they have learned the language well, have composed a vocabularies , a grimmer a confessionary and prayers, they have translated the Christian doctrain etc, nothing of which” – কিন্তু এটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, কেবল এই সংবাদ টুকু ছাড়া ।

#মনোএলএর পর বাংলা অভিধান রচিত হচ্ছে অগুস্ত্যা ওসাঁ র হাতে। ওসাঁ একজন ফরাসী নাগরিক । চন্দননগরের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি বাংলা ফরাসি অভিধান সংকলন করেন। এটির কোন মুদ্রিত কপি পাওয়া যায়নি । হাতে লেখা পান্ডুলিপি ফ্রান্সের জাতীয় গ্রন্থাগারে রাখা আছে। সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় ফ্রান্সে থাকাকালীন এই পুঁথিটি দেখেন এবং তাঁর বিবরন অনুযায়ী গ্রন্থ পরিচয় এই রকম-

১) ফরাসী, ফারসী, উর্দূ ও বাংলা গোত্র সম্পর্ক ও কুটুম্বিতা সম্বন্ধীয় শব্দাবলীঃ ১৭৮২ খৃষ্টাব্দ, ফরাসী ও বাংলা হরফে লিখিত। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১২।

২) ফরাসী ও বাংলা অভিধান , প্রায় ১১০০০ ফরাসী শব্দ ও তার ৩০০০০ বাংলা প্রতিশব্দ। ১৭৮৩ । বাংলা শব্দগুলি রোমান হরফে লিখিত। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৮৪।

৩) ফরাসী ও বাংলা শব্দকোষ , প্রায় ১২৫০০ ফরাসী শব্দ ও তার তিনগুন বাংলা প্রতিশব্দ ১৭৮১ র মধ্যে সংকলিত, পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৬০ পরে ১৭৮৩ তে পুনর্লিখিত।

৪) ফরাসী , ইংরেজি , ভারতে প্রচলিত পোর্তুগীজ শব্দ, ফারসী, উর্দূ ও বাংলা শব্দ সংগ্রহ, শব্দশংখ্যা ৩৭০০ থেকে ৩৮০০ , ১৭৮২ খৃষ্টাব্দে রোমান হরফে লেখা , পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৯৬।

মোট চারখানি পান্ডুলিপি।

# “ইংরাজী ও বাঙ্গালী বোকেবিলারি, /AN EXTENSIVE / VOCABULRIEY/ Bengalese and English” ই হল প্রথম বঙ্গাক্ষরে মূদ্রিত বাংলা অভিধান, সজনীকান্ত দাশ এর মতে এর রচনাকার হলেন আপজন। সজনীকান্ত এই অভিধানের খবর সংগ্রহ করেন। (সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা ,১৩৪৩ চতুর্থ সংখ্যা) ১৭৯৩ খৃষ্টাব্দে এটি প্রকাশিত হয়। এটি বাংলা ইংরাজি অভিধান।

#প্রথাসিদ্ধ বাংলা অভিধান রচনার প্রথম সংগঠিত প্রয়াস পাই এইচ পি ফরস্টারের( এই ফরস্টারের জন্যই আদালতে আইনের ভাষা ফারসী থেকে বাংলা য় পরিবর্তিত হয়) থেকে । তার অভিধান টি হোল “A Vocabulary , in two parts, English and Bongalee, and vice versa by H.P. Forster , Senior merchant on the Bongal Establishment”
গ্রন্থ টি উৎসর্গ করেন Graham Esqr কে।
পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪৪২, শব্দ সংখ্যা ১৬৫০০, বাংলা অক্ষরগুলি চার্লস উইল্কিন্স কর্তৃক খোদিত। এটি দুই খন্ডে প্রকাশিত , প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয় ১৭৯৯ এ এবং দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয় ১৮০২ এ।

ঊইলিয়াম কেরির বাংলা অভিধান টি প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয় ১৮১৫ খৃষ্টাব্দে। যদিও অন্যান্য গ্রন্থে ১৮২৫ ই বলা হয় প্রকাশ কাল কারন কেরির প্রথম খন্ডাংশ টি ১৮১৫ খৃঃ প্রকাশিত হলেও হরফ গুলি খুব বড়ো থাকার কারনে বই বিপুল আয়তন নিলে পরবর্তীকালে কেরী এই বই ছাপা বন্ধ করে পুনরায় নূতন হরফ নির্মানে প্রয়াসী হন ও নূতন হরফ এ বইটি প্রকাশিত হয় ১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দে, তথ্যের খাতিরে কিন্তু প্রথম প্রকাশকাল হিসেবে ১৮১৫ কেই ধরা হয়।
কেরির অভিধানের আখ্যাপত্রটি এই রকম A/DICTIONARY / OF THE / BENGALEE LANGUAGR/ IN WHICH / THE WORD ARE TRACED/ TO THEIR ORIGIN/ AND /THEIR VERIROUS MEANING GIVEN/VOL;1/ BY W CAREY.

১৮১৭ খৃঃ প্রকাশিত রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ মহাশয়ের বঙ্গভাষাভিধান প্রথম বাংলা – বাংলা অভিধান।

লেখকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন-

© Subrata Laha নামে ফেসবুকে সার্চ করে।

অথবা এই ফোন নম্বরে -8170094194

সুব্রত লাহা

[3/6, 11:23 PM] You Suf: [3/11, 11:18 AM] You Suf: [3/11, 11:20 AM] You Suf: [3/11, 11:31 AM] You Suf:
[3/11, 4:30 PM] You Suf: google.com, pub-9150759165799348, DIRECT, f08c47fec0942fa0