🌻রাজশেখর বসু(পরশুরাম)-র সম্পূর্ণ তথ্য🌻

📚রাজশেখর বসু (পরশুরাম)📚
- ইউসুফ মোল্লা (কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) 

রাজশেখর বসু

#জন্ম: ১৬ মার্চ, ১৮৮০ (১২৮৬ বঙ্গাব্দের ৪ চৈত্র) 

#জন্মস্থান: বর্ধমান জেলার বামুনপাড়া গ্রামে। মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। 

#পৈতৃক নিবাস: নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের কাছে উলা বীরনগর। 


#পিতা: দার্শনিক পণ্ডিত চন্দ্রশেখর বসু (দ্বারভাঙ্গা রাজ-এস্টেটের ম্যানেজার।) জন্ম: ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে। 

#মাতা: লক্ষ্মীমণি দেবী

#স্ত্রী: মৃণালিনী দেবী (শ্যামাচরণ দে'র পৌত্রী) 

#কন্যা: প্রতিমা

#নাতনি: আশা


#প্রদৌহিত্র: দীপঙ্কর

#ভাই: শশীশেখর, কৃষ্ণ শেখর, গিরীন্দ্র শেখর। 

#মৃত্যু: ২৭ এপ্রিল , ১৯৬০
কলকাতায়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে। 

 #ছদ্মনাম: পরশুরাম , উপরিচর। (বাল্যকালে 'ফটিক' নামে পরিচিত ছিলেন) 


#নামের রহস্য: 

     রাজশেখর বসুর বড় ভাই শশীশেখরের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায় "পিতা চন্দ্রশেখর দ্বারভাঙ্গা থেকে ঘুরে এসে বলেন ফটিকের নাম ঠিক হয়ে গেছে। তখন মহারাজ লক্ষীশ্বর সিংহ জিজ্ঞাসা করেন, তোমার দ্বিতীয় ছেলের নামও একটা শেখর হবে নাকি? আমি বললাম, ইওর হাইনেস, যখন তাকে আশীর্বাদ করেছেন, তখন আপনিই তার শিরোমাল্য, আমি আপনার সামনেই তার নামকরণ করলাম রাজশেখর।"

     বেঙ্গল কেমিক্যালের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় একবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে ফটিকের নামে কৃতিম অভিযোগ করে বলেন "আপনি ফটিকের বইয়ের এত প্রশংসা করছেন যে বেঙ্গল কেমিক্যাল অসুবিধায়। প্রশংসার দরুন বেঙ্গল কেমিক্যাল ক্ষতির সন্মুখিন হবে। কারণ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সব কাজকর্ম শিকেয় তুলে, কেমিস্ট্রি ছেড়ে গল্প লেখায় মত্ত হবে"। রবীন্দ্রনাথ এর যথাযথ উত্তরও দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ একবার ফটিককে বলেছিলেন " তুমি এত রস কোথা থেকে পাও?" ফটিকের উত্তর ছিল "আপনি ভুলে যাচ্ছেন, আমি রসায়নের লোক।" এই ফটিকের নামের আড়ালে মানুষটা হচ্ছেন রাজশেখর বসু।


#শিক্ষালাভ:

@প্রথম সাত বছর মুঙ্গের জেলার খড়নপুরে কাটান। 

@তারপর ১৮৮৮-১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে দ্বারভাঙ্গা রাজস্কুল থেকে এন্ট্রাস পাশ করেন। এই স্কুলে তিনিই একমাত্র বাঙালি ছাত্র ছিলেন। 

@১৮৯৫-১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে পাটনা কলেজ থেকে এফ.এ পাশ করেন। এইসময় রাজেন্দ্র প্রসাদ (প্রথম রাষ্ট্রপতি) জ্যৈষ্ঠ ভ্রাতা মহেন্দ্র প্রসাদ তাঁর সহপাঠী ছিলেন।

@১৮৯৭-১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সসহ বি.এ পাশ করেন।  এইসময় তাঁর বিবাহ হয়। 

@তখনও এম.এস.সি কোর্স চালু না হওয়ায় ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে রসায়নে এম.এ পরীক্ষা দেন এবং প্রথম হন।

@এম.এ পাশ করার দুবছর পর অর্থাৎ ১৯০২ সালে আইনের উপর বি. এল পাশ করেন। 

#কর্মজীবন:

@১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার রিপন কলেজ থেকে বি.এল পাশ করে মাত্র তিনদিন আইন ব্যবসায় করেছিলেন। 

@১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে সদ্য প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস কোম্পানীতে ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে চাকুরী-জীবনের শুরু করেন। সেখানে তিনি একজন রাসায়নিক হিসেবে সামান্য বেতনে নিযুক্ত হন । স্বীয় দক্ষতায় অল্পদিনেই তিনি আচার্য স্যার প্রফুল্লচন্দ্র রায় ও তৎকালীন ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডাঃ কার্তিক বসুর প্রিয়ভাজনর হন। ১৯০৬ সালে তিনি বেঙ্গল কেমিক্যালের সর্বময় কর্তৃত্বের ভার গ্রহণ করেন। সেই থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত এই স্বদেশী প্রতিষ্ঠানটির সর্বদিক দিয়ে উন্নতি ঘটিয়ে অবসর গ্রহণ করেন। 

@১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঐ কোম্পানীর পরিচালক পদে উন্নীত হন। স্বাস্থ্যহানির দরুন অবসর নিলেও উপদেষ্টা এবং পরিচালক পদে আমৃত্যু এই কোম্পানীর সাথে যুক্ত ছিলেন। 

@১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ শাসিত অবিভক্ত ভারতে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হলে তিনি তাতে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন।

@গিরীন্দ্রশেখরই লুম্বিনী পার্ক মানসিক হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা। জমিটি দান করেছিলেন রাজশেখর বসু। 


#সাহিত্যকর্ম:

      রাজশেখর বসুর সাহিত্যিক কর্মজীবন শুরু হয় ১৯২০-এর দশকে। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে ‘পরশুরাম’ ছদ্মনামে তিনি একটি মাসিক পত্রিকায় 'শ্রীশ্রীসিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড' নামে ব্যঙ্গ রচনা প্রকাশ করেন। সেখানে অনেকগুলো রসরচনামূলক গল্পগ্রন্থ রচনা প্রকাশ করেন, যা তাকে প্রভূত জনপ্রিয়তা প্রদান করেছিল। শনিবারের চিঠি পত্রিকাতেও তিনি নিয়মিত লিখেছেন। গল্পরচনা ছাড়াও স্বনামে প্রকাশিত কালিদাসের মেঘদূত, বাল্মীকি রামায়ণ (সারানুবাদ), কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসকৃত মহাভারত (সারানুবাদ), শ্রীমদ্‌ভগবদ্‌গীতা ইত্যাদি ধ্রুপদি ভারতীয় সাহিত্যের অনুবাদগ্রন্থগুলিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয় রাজশেখর বসু বিরচিত বাংলা অভিধান চলন্তিকা। এগুলি ছাড়াও লঘুগুরু, বিচিন্তা, ভারতের খনিজ, কুটির শিল্প প্রভৃতি প্রবন্ধগ্রন্থও রচনা করেছিলেন তিনি। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা মোট ২১টি।



#স্বনামে প্রকাশিত রচনা:

১) চলন্তিকা (১৯৩০) , 

২) লঘুগুরু (১৯৩৯) , 

 ৩) কালিদাসের মেঘদূত, 

৪)বাল্মীকি রামায়ণ -সারানুবাদ  (১৯৪৬), 

৫) বিচিন্তা (১৯৫৫), 

৬) কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসকৃত মহাভারত -সারানুবাদ , 

৭) শ্রীমদ্‌ভগবদ্‌গীতা ইত্যাদি। 



#পরশুরামের  রচিত গল্পগ্রন্থ:

১)গড্ডলিকা (১৯২৪): চিকিত্‍‌সা সঙ্কট, ভুশণ্ডীর মাঠে, মহাবিদ্যা, লম্বকর্ণ, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড।

২)কজ্জলী (১৯২৭): উলট পুরাণ, কচি সংসদ, জাবালি, দক্ষিণ রায়, বিরিঞ্চিবাবা, স্বয়ম্বরা।

৩)হনুমানের স্বপ্ন ইত্যাদি গল্প (১৯৩৭): উপেক্ষিত, উপেক্ষিতা, গুরুবিদায়, তৃতীয় দ্যূতসভা, দশকরণের বানপ্রস্থ, প্রেম্চক্র, পুনর্মিলন, মহেশের মহাযাত্রা, রাতারাতি, হনুমানের স্বপ্ন।

৪) গল্পকল্প (১৯৫০): অটলবাবুর অন্তিম চিন্তা, গামানুষ জাতির কথা, চিরঞ্জীব, তিন বিধাতা, পরশপাথর, ভীমগীতা, রাজভোগ, রামরাজ্য, শোনা কথা, সিদ্ধিনাথের প্রলাপ। 

৫) ধুস্তুরীমায়া ইত্যাদি গল্প (১৯৫২): অক্রূর সংবাদ, অগস্ত্যদ্বার, গন্ধমাদন বৈঠক, ধুস্তুরীমায়া, নবজাতক, ভরতের ঝুমঝুমি, যদু ডাক্তারের পেশেণ্ট, রটন্তীকুমার, রামধনের বৈরাগ্য, রেবতীর পতিলাভ, লক্ষ্মীর বাহন, ষষ্ঠীর কৃপা। 

৬) কৃষ্ণকলি ইত্যাদি গল্প (১৯৫৩): আতার পায়েস, একগুঁয়ে বার্থা, কৃষ্ণকলি, জটাধর বকশী, পঞ্চপ্রিয়া পাঞ্চালী, নিরামিষাশী বাঘ, নিকষিত হেম, বরনারীবরণ, বালখিল্যগণের উত্‍‌পত্তি, ভবতোষ ঠাকুর, সরলাক্ষ হোম।

৭) নীল তারা ইত্যাদি গল্প(১৯৫৬): জটাধরের বিপদ, জয়হরির জেব্রা, তিরি চৌধুরী, তিলোত্তমা, দ্বান্দিক কবিতা, ধনুমামার হাসি, নীলতারা, নীলকণ্ঠ, নিধিরামের নির্বন্ধ, মাঙ্গলিক, শিবলাল, শিবামুখী চিমটে, স্মৃতিকথা।

৮) আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প (১৯৫৭): অদল বদল, আনন্দীবাঈ, কামরূপিণী, কাশীনাথের জন্মান্তর, গগন চটি, চাঙ্গায়নী সুধা, চিঠিবাজি, ডম্বরু পণ্ডিত, দুই সিংহ, নির্মোক নৃত্য, নবজাতক, বটেশ্বরের অবদান, বদন চৌধুরীর শোকসভা, যযাতির জরা, রাজমহিষী, সত্যসন্ধ বিনায়ক।

৯) চমত্‍‌কুমারী ইত্যাদি গল্প(১৯৫৯): উত্‍‌কণ্ঠা স্তম্ভ, উত্‍‌কোচ তত্ত্ব, কর্দম মেখলা, গণত্‍‌কার, গুপি সাহেব, গুলবুলিস্তান, চমত্‍‌কুমারী, জয়রাম জয়ন্তী, দাঁড়কাগ, দীনেশের ভাগ্য, প্রাচীন কথা, ভূষণ পাল, মাত্‍‌স্য ন্যায়, যশোমতী, সাড়ে সাত লাখ।

#বিষয়ানুসারে রাজশেখর বসুর গল্পগুলিকে কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে। সেগুলি নিম্নে দিলামঃ

১) সাধু-গুরু-ভবিষ্যৎ বক্তা সম্পর্কিত : 
শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড, বিরিঞ্চি বাবা, গুরু বিদায়।

২) প্রেম- প্রীতি- দাম্পত্য জীবন ও নরনারীর বিচিত্র সম্পর্ক বিষয়ক :
ভূশন্ডির মাঠে, চিকিৎসা সংকট, লম্বকর্ণ, স্বয়ম্বর, পঞ্চপ্রিয়া পাঞ্চালী, রাজমহিষী, উৎকন্ঠা স্তম্ভ।

৩) ভূত ও অতিপ্রাকৃতিক বিষয় :
ভূশন্ডির মাঠে, মহেশের মহাযাত্রা, বদন চৌধুরীর শোকযাত্রা, জটাধর বক্সী।

৪) তদ্ভট ও আজগুবি বিষয়ক : 
উলাট পুরাণ, পরশপাথর, জাদু ডাক্তারের পেসেন্ট, অদল বদল।

৫) মানুষে- পশুতে, পশুতে- মানুষে : 
লম্বকর্ণ, দক্ষিণ রায়, নিষিত হেম, যযাতি জরা।

৬) পশু পাখি সংক্রান্ত :
গুরু বিদায়, লক্ষ্মীর বাহন, ষষ্ঠীর কৃপা, নিরামিষাশী, শিবলাল, রাজ মহিমা।

৭) জড় পদার্থ কেন্দ্রীক :
পরশপাথর।

৮) পুরাণ বিষয়ক :
জাবালি, পুনর্মিলন, প্রেম চক্র, তিন বিধাতা, ভারতের ঝুমঝুমি, স্মৃতি কণা, ডমরু পন্ডিত।

৯) রাজনীতি-অর্থনীতি- সামাজিক বিষয়ক :
রামরাজ্য, গন্ধ মাদান বৈঠক, মাঙ্গলিক, উৎকোচ তত্ত্ব।

১০) কল্প বৈজ্ঞানিক প্রসঙ্গ :
মাঙ্গলিক, গগনচটি।

১১) মনুষ্যত্ববোধ ও আদর্শমূলক :
মহেশ্বর মহাযাত্রা, অটলবাবুর অন্তিম চিন্তা, ভবতোষ ঠাকুর, ধনু মামার হাসি, নির্মোকনৃত্য।

১২) সাহিত্যাদর্শ ও সাহিত্যিক সংক্রান্ত :
কচি সংসদ, প্রেমচক্র, রটেশ্বরের অবদান।


#সন্মাননা ও স্বীকৃতি সম্পাদনা:

@১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদক লাভ করেন। 

@ ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে সরোজিনী পদকেও ভূষিত হন।

@১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ "কৃষ্ণকলি ইত্যাদি গল্পগ্রন্থ"-এর  জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত করে। 

@১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ উপাধি প্রদান করে।

@১৯৫৭-৫৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত হন তিনি।

@"আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্পগ্রন্থ" বইটির জন্য তিনি ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেছিলেন। 

@১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত বানান-সংস্কার সমিতির সভাপতি হন তিনি। 

@১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিভাষা সংসদের সভাপতিত্বও করেন রাজশেখর বসু। 

@ এছাড়াও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি প্রদান করে। 

@২০১৯ সালে নদীয়া জেলা লিটিল ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে "রাজশেখর বসু স্মৃতি পুরস্কার" চালু করেন। 
প্রথম প্রাপকের নাম- সৈকত রক্ষিত। 

 #চলচ্চিত্র নির্মাণ:

বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় রাজশেখর বসুর দু'টি ছোটগল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। সেগুলো হলো "পরশ পাথর "এবং "বিরিঞ্চি বাবা "অবলম্বনে নির্মিত "মহাপুরুষ" সিনেমা।

#উল্লেখযোগ্য তথ্য:

@আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর কাছে কিছুদিন  বি. এ পড়েছিলেন রাজশেখর বসু। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, অনেকেই মনে করেন তিনি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ছাত্র ছিলেন। এ ধারণা ভুল। 

@রাজশেখর বসুর গল্প পড়ে প্রফুল্লচন্দ্র বলেছিলেন, "এই বুড়া বয়সে তোমার গল্প পড়িয়া হাসিতে হাসিতে choked হইয়াছি। "

@ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "গড্ডলিকা" গল্পগ্রন্থের চরিত্র সম্পর্কে বলেছিলেন, "বইখানি চরিত্রের চিত্রশালা"। 

@রাজশেখর বসুর বুদ্ধিদীপ্ত মানসিকতাকে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় "Most uncommon commonsense" বা "সুবুদ্ধি জ্যোতি" বলে উল্লেখ করেছিলেন। 

@রাজশেখর বসু কোনও স্মৃতিকথা বা জীবনচরিত লেখেননি।

@বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ হাস্যরসিক গল্পকার রাজশেখর বসু। 

@ একেবারে শেষ বয়সে অর্থাৎ ৪২ বছর বয়সে তিনি প্রথম  গল্প রচনা করেন। 

@জলধর সেন "ভারতবর্ষ" পত্রিকায় রাজশেখর বসুর প্রথম গল্প ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে পরশুরাম ছদ্মনামে "শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড" ছাপেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৪২ বছর । 
চমৎকার ব্যাপার হলো, পরবর্তী কালের প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলির প্রথম রচনা "দেশে-বিদেশে" বইটিও প্রকাশিত হয় ৪২ বছর বয়সে।

@রাজশেখর বসু নিজেই রস সাহিত্যিক ছিলেন, আবার নিজেই বলতেন, রস সাহিত্যিক আবার কী! 

@সৈয়দ মুজতবা আলী রাজশেখরকে লেখা এক চিঠিতে মন্তব্য করেছিলেন— “আপনার সমস্ত পাণ্ডুলিপি যদি হারিয়ে যায় আমাকে বলবেন, আমি স্মৃতি থেকে সমস্ত লিখে দোব।” তাঁর গল্পের কেমন আকর্ষণ, এ থেকেই স্পষ্ট।

@১৪ নম্বর পার্শিবাগান লেন ছিল বসু ভাইদের পৈতৃক বাড়ি। সেখানে এক বিরাট আড্ডা বসত, মধ্যমণি মেজভাই রাজশেখর। মজলিশ প্রত্যেক দিনই বসত, তবে জমজমাট হত ছুটির দিন রবিবারে, বৈঠকখানা গমগম করে উঠত। কত নামকরা ডাক্তার, অধ্যাপক, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, শিল্পী, ইতিহাসবিদ সেখানে আসতেন। যদুনাথ সরকার, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মানুষেরা হাজির হতেন। মজলিসে চা, দাবা, তাসের সঙ্গে চলত মনস্তত্ত্ব, বিজ্ঞান, শিল্প, কাব্য, পুরাণ, ইতিহাস, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। আড্ডার একটা নামও ছিল— ‘উৎকেন্দ্র সমিতি’। প্রথমে একটা ইংরেজি নাম ছিল, পরে তা বদলে বাংলা নাম দেন রাজশেখর। রবীন্দ্রনাথের যেমন ‘বিচিত্রা’, সুকুমার রায়ের যেমন ‘মানডে ক্লাব’, রাজশেখরের তেমনই ‘উৎকেন্দ্র সমিতি’। রাজশেখর এখানে প্রাণ খুলে কথা বলার সুযোগ পেতেন, আবার লেখার প্রচুর রসদ সংগ্রহ করতেন এখান থেকেই। পরশুরামের গল্পেও এর উল্লেখ পাই— ‘বিরিঞ্চিবাবা’ গল্পের চৌদ্দ নম্বর হাবশীবাগান লেনের আড্ডা। 
ছোটবেলা থেকে এই সব দেখে ভাইয়ের প্রতিভায় মুগ্ধ বড়দাদা শশিশেখর লিখেছিলেন, ‘সায়েনটিফিক মেকানিক্যাল ব্রেন’।

@তিনি নাকি বলতেন "আমি যখন ঠাট্টা করে কিছু লিখি তখন 'পরশুরাম' বলে লিখি। আর যখন 'গম্ভীর' হয়ে লিখি তখন নিজের নামে লিখি।" কথাটা সম্পূর্ণ সঠিক বলা যাবেনা কেননা চাপল্যের কোনো স্পর্শ নেই এমন বেশ কিছু মনে রাখার মতো গল্পও পরশুরাম লিখেছেন।

@ বড়ো ভাই শশিশেখর একটা রঙ্গব্যঙ্গের কলাম লিখতেন রবিবারের ইংরেজী কাগজে, পরে রবিবাসরীয় 'যুগান্তর' পত্রিকায়। সেগুলো পরে এক সংগ্রহে ছাপা হয়েছে, পড়ে মজা পাওয়া যায়, যদিও তাতে আদিরসের ভাগটা একটু বেশী বলে কেউ কেউ মনে করেন। সবচেয়ে ছোটো ভাই গিরীন্দ্রশেখর নামকরা মনোবিজ্ঞানী আর তাঁর ছোটোদের জন্য লেখা অন্তত একটা মারাত্মক মজার বই ("লালকালো") আছে।

@রাজশেখর ছিলেন এক গল্পকার। উপন্যাসে তিনি হাত দেন নি। তাঁর মৃত্যুর পর একটা কবিতাসংগ্রহও প্রকাশ করা হয়েছিল, না করলেও কিছু এসে যেতো না। নয়খানা সঙ্কলন গ্রন্থে প্রকাশিত সাতানব্বইটি গল্প আর মৃত্যুর পরে উদ্ধার করা আরো তিনটি -- এই পুরোপুরি একশো গল্পের ডালি পরশুরামের। 

@ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ মোট ২১টি।

@"চলন্তিকা "অভিধান প্রণয়নের জন্য তিনি সর্বাধিক পরিচিতি। যেটি প্রকাশিত হয় ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে। 

@তাঁর লেখা প্রথম গল্পগ্রন্থ "গড্ডালিকা" (১৯৪২) , যেটি শিল্পী যতীন্দ্র কুমার সেনের ব্যঙ্গচিত্র সহ মুদ্রিত হয়। 

@তাঁর লেখা শেষ গল্প "জামাই ষষ্ঠী" রচনা শুরু করলেও শেষ করে যেতে পারেন নি। 

@রাজশেখর বসুর সর্বশেষ রচনা "রবীন্দ্রকাব্য বিচার"। 

@রাজশেখর বসুর মৃত্যুতে সৈয়দ মুজতবা আলি
বলেছিলেন, "হঠাৎ যেন চোখের সামনে  একটা বিরাট সমুদ্র শুকিয়ে গেল"। 

@স্কুলের মাস্টার মহাশয়ের প্রিয় 'অশুদ্ধ' বানান ছিল " গড্ডালিকা "।  সেই নামেই তিনি প্রথম গল্পের বই বের করলেন। 


#তথ্যসংগ্রহঃ

১) রাজশেখর বসু ক্রোড়পত্র: সম্পাদনা দীপঙ্কর বসু

২) রাজশেখর বসু সংবর্ধনা সংখ্যা:শ্রাবণ ১৩৮০ - গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য

৩) বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (আধুনিক যুগ ) - তপন কুমার

৪) অদ্বিতীভট্টাচার্য - অমিতাভ চৌধুরী

৫) বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস (৪র্থ খণ্ড) - সুকুমার সেন

৬) রাজশেখর বসু - দীপেন সাহা

৭)পরশুরামের গল্প:জীবনদৃষ্টি ও শিল্পরূপ - সঞ্জীব দাস।

৮) অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

৯) ইন্টারনেটের বিভিন্ন পেজ। 

আমাদের এই ব্লগে লেখা দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন :

📱- 7908778177

WhatsApp- 8436871092

Email- yousufamin07@gmail.com

এছাড়া আমাদের ফেসবুক গ্রুপের সাথে যুক্ত হন ও যোগাযোগ করুন-

[3/6, 11:23 PM] You Suf: [3/11, 11:18 AM] You Suf: [3/11, 11:20 AM] You Suf: [3/11, 11:31 AM] You Suf:
[3/11, 4:30 PM] You Suf: google.com, pub-9150759165799348, DIRECT, f08c47fec0942fa0