Skip to main content

Posts

আমার বন্ধুর কথা

 এক ঝরে যাওয়া প্রতিভা, সন্দীপের কথা — ইউসুফ মোল্লা      এ লেখা লিখতে বসলেই মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। তবুও লিখতে হবে। কারণ সাহিত্য জগতে তার অবদান অস্বীকার করার জায়গা নেই। মাধ্যমিকে পড়ার সময় একটা ভাবসম্প্রসারণ করতাম, "জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে চিরস্থির করে নীর   হায়রে জীবন-নদে?" তখন এর মূলভাব বুঝতাম না। আমাকে নম্বর পেতে হবে, এই উদ্দেশ্য নিয়ে মুখস্থ করতাম। এখন বুঝতে পারি জন্ম মাত্রই মৃত্যু অনিবার্য; কিন্তু মহৎ কার্যাবলির মাধ্যমে মানুষ জগতে অমরত্ব লাভ করে। সন্দীপ(দাস) ঠিক সেইরকম। খুব অল্প বয়সে চলে গেলো আমাদের ছেড়ে, কিন্তু তার সেই সাহিত্য চর্চা- অমর কীর্তি আমাদের কাছে অমরত্ব লাভ করেছে। আমি চাই আরো দীর্ঘদিন তার নিয়ে চর্চা হোক। মাত্র ৩৩ বছরের এই জীবনে একাধিক বই প্রকাশ করেছিল। আমার জানা মতে আটটির অধিক বই প্রকাশ করেছিল। তার যেকোনো একটি বই পড়লে বোঝা যায় তার চিন্তাভাবনা,জ্ঞানের গভীরতা কতখানি। যেমন- 'ডায়েরির ছেঁড়া পাতা' প্রবন্ধ সংকলনে আছে রামকিঙ্কর বেইজের জীবন ও শিল্প, বাউড়ি জনজাতির পুজো, দেবদেবী, লোকাচার ইত্যাদি বিষয়ের পাশাপাশি ভারতীয় সমাজে নারীদের অবস্থা
Recent posts

অভিনয় জগতের বাইরে পুলুবাবুর জীবন _ ইউসুফ মোল্লা

  অভিনয় জগতের বাইরে পুলুবাবুর জীবন _ ইউসুফ মোল্লা ম্যাট্রিকুলেশন পাশের পর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতার সিটি কলেজে ভর্তি হন। প্রথম দু'বছর সায়েন্স নিয়ে পড়লেও আগাগোড়া সাহিত্যের প্রতি অগাধ টান থাকায় আইএসসি থেকে বাংলা অনার্সে বিএ পাশ করেন। বাবা যদিও চেয়েছিলেন বটানি নিয়ে ছেলে পড়াশোনা করুক। ফরেস্ট অফিসার হোক। কিন্তু তা আর হওয়া হলো না। হলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক, সম্পাদক এবং অভিনেতা। তিনি নিজেই এনসিসি করার কারণে মিলিটারির দিকে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর বাবার নিষেধের কারণে সেটা হওয়া হলো না। তাঁর বাবা বললেন, "ওই লাইফ তোমার পক্ষে ঠিক হবে না"। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এর কারণ জিজ্ঞাসা করতে, তাঁর বাবা উত্তর দেন- "আর্মিতে প্রতিটি বিষয়ে তোমার ঊর্ধ্বতনকে স্যালুট ঠুকতে হবে। সেটা তুমি পারবে না।" তাঁর বাবার এই অন্তর্ভেদী কথা সারা জীবন তাঁর নানা কাজে লক্ষ্য করা গেছে। তাইতো বর্তমান সরকারের বিপক্ষে NRC- র বিরুদ্ধে সই করতে দেখা গিয়েছিল। আজীবন শিরদাঁড়া সোজা করে চলেছিলেন, কারো সামনে মাথা নত করেননি।       সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মার্ক্সের সমর্থন হলেও কখনো কমিউনিস্ট পার্

জীবনানন্দ দাশ: প্রতিবন্ধকতা ও সফলতা

 জীবনানন্দ দাশ: প্রতিবন্ধকতা ও সফলতা - ইউসুফ মোল্লা "সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি"(কবিতার কথা) - এই কথা যিনি বলতে পারেন, তিনি যে 'শুদ্ধতম কবি' হবেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখেন না। জীবনের আনন্দ নিয়ে জীবনানন্দ হননি, জীবদ্দশায় তিনি পাঠকমহলে জনপ্রিয় ছিলেন না। তাইতো মাত্র সাতটি গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছিল জীবদ্দশায়। মৃত্যুর পরে তাঁর লেখার খাতায় অগ্রন্থিত প্রচুর কবিতা, গল্প পাওয়া যায়। সত্তর দশকের পরে পাওয়া উপন্যাসগুলো প্রকাশিত হওয়ার পরে জানতে পারা যায়, তিনি শুধু কবি নন, মনোগ্রাহী উপন্যাসিকও। যেমন- মাল্যবান (১৯৭৩),সুতীর্থ(১৯৭৭), সফলতা-নিষ্ফলতা(২০০৫)। একইভাবে প্রবন্ধকার হিসাবে পরিচিতি লাভ না ঘটলেও তাঁর প্রথম প্রবন্ধের বই 'কবিতার কথা'(১৯৫৬) বাংলা সাহিত্যের রদবদল ঘটিয়ে দেয়। তাঁর মা কুসুমকুমারী দাশ যে ধরনের 'আদর্শ ছেলে' খুঁজেছেন, তিনি তা হয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। কথায় বড় হননি, কাজের মাধ্যমেই বড় হয়েছেন। কবি ছিলেন অসম্ভব গম্ভীর প্রকৃতির এবং চরম ধৈর্যশীল মানুষ। ভালোবাসতেন পরিবারকে, সংসারের টুকিটাকি কাজগুলো ভালোবাসতেন। দুই ছেলেমেয়ে, স্ত্রী লাবণ্যের পেনসিলের মাথা ধার

ছেদচিহ্নের ব্যবহার জেনে নিন

  ছেদচিহ্নের সঠিক ব্যবহার কীভাবে করবেন: ✒ ইউসুফ মোল্লা     প্রথমেই বলে রাখি ছেদচিহ্ন আর যতিচিহ্ন এক জিনিস নয়। এই ভুলটা প্রায় সকল শিক্ষার্থী করে থাকে।       এবার বলি ছেদচিহ্নের সঠিক ব্যবহার কেন দরকার। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে: একটি দোকানের পাশে পরিত্যক্ত জায়গা পেয়ে সবাই প্রস্রাব করতে থাকে, ফলে দোকানদার প্রস্রাবের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। দোকানদার সেই জায়গার দেওয়ালে লিখে দিলেন, "এখানে প্রস্রাব করিবেন না, করিলে ৫০০ টাকা জরিমানা হইবে।" কিন্তু ভুল করে কমাটা 'না' শব্দের আগে হয়ে যায়। ফলে সবাই পড়তে থাকে, "এখানে প্রস্রাব করিবেন, না করিলে ৫০০ টাকা জরিমানা হইবে।" আসলে বাক্য, শব্দ সবকিছু ঠিক থাকলেও ছেদচিহ্নের  ভুল ব্যবহারের ফলে অর্থ সম্পূর্ণ পাল্টে যেতে পারে। তাই ছেদচিহ্নের সঠিক ব্যবহার জানা একান্ত প্রয়োজন। নিম্নে তাই ছেদচিহ্নের সঠিক ব্যবহার বোঝানোর চেষ্টা করলাম:- ১) পূর্ণচ্ছেদ (।) :    প্রাচীন কাব্যে লক্ষ করা যায়, পংক্তি শেষ হলেই পূর্ণচ্ছেদ ব্যবহার করা হয়। বাক্য শেষ হোক বা না হোক তার উপর নির্ভর করতো না।  কিন্তু এখন ছেদচিহ্নের সঠিক

রুশ সাহিত্যের জন্ম ও তার উৎকর্ষতা

#প্রবন্ধ রুশ সাহিত্যের জন্ম ও তার উৎকর্ষতা _ ইউসুফ মোল্লা     ইতিহাস মানবসভ্যতাকে আরো সৃজনশীল করতে সাহায্য করে। ইতিহাসের মধ্যে আমরা আমাদের শিকড়কে খুঁজে পাবো। আর যে সমাজ বা ব্যক্তি তার শিকড়কে ভুলে যায়, সে আর যাইহোক উন্নত হতে পারে না। আমাদেরকে আরো উন্নত হতে সাহায্য করে এই ইতিহাস । কারণ ইতিহাস থেকে নানা ভুল ত্রুটির শিক্ষা নিয়ে সেগুলো শুধরে নিয়ে থাকি, ফলে নান্দনিক সমাজ গড়ে ওঠে।    সেইরকম এক ইতিহাসের পাতায় পদচারণা করবো আজ। বিশ্বের সবচেয়ে পড়ুয়া জাতি নামে পরিচিত সেই সংস্কৃতিকে জানার চেষ্টা করবো। প্রথমেই জানবো সেই সংস্কৃতি কোথা থেকে এসেছে। ইন্দো-ইরোরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এই রুশ ভাষা। প্রাচীন পূর্ব স্লাভিক (প্রাচীন রুশ) ভাষার লিখিত কাগজপত্র পাওয়া যায় দশম শতাব্দীর পর থেকে।    প্রামাণ্য দলিল হিসেবে রুশ সাহিত্যের ইতিহাসের পথচলা শুরু হয় দশম শতাব্দী থেকে কিন্তু তা তখন পরিপুষ্ট ছিল না। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মিখাইল লোমোনোসোভ ও দেনিস ফনভিজিনের রচনার মধ্য দিয়ে তা বিকাশ লাভ করতে শুরু করে এবং ঊনিশ শতাব্দী থেকে আধুনিক ধ্যান ধারণার জন্ম হলে কিছু সেরা লেখকদের আবির্ভাব ঘটে। যার ফলে

জানা অজানা সমর সেন (সম্পূর্ণ)

সমর সেন _ ✒কলমে- সুব্রত লাহা (এম. এ. বাংলা)  বর্তমানে SRMS vidyapith-HS স্কুলের Group C পদে কর্মরত।  শখ- নতুন নতুন তথ্য জানা ও সংগ্রহ করা। তাই নিজেকে "শখের পড়ুয়া" বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন।  বাস করেন- Bakshi    ১৯১৬ খৃষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর কলকাতার বাগবাজারের বিশ্বকোষ লেনে(পৃথিবীতে বইয়ের নামে এই একটিই রাস্তা আছে, কারন এখানেই প্রাচ্যবিদ্যার্ণব নগেন্দ্রনাথ বসুর বাড়ি , ইনিই বিশ্বকোষের সংকলক।) সমর সেনের জন্ম। তিনি কালজয়ী দীনেশচন্দ্র সেনের পৌত্র। তাদের আদি নিবাস ছিল ঢাকার মানিকগঞ্জ থানার সুয়াপুর অঞ্চল। গৃহস্থবিলাপ কবিতায় কবি তার প্রপিতামহের পরিচিয় দিয়েছেন। এদের পূর্বপুরুষ ছিলেন পবনদূত কাব্যের ধোয়ী। সমর সেনের পিতা – অরুনচন্দ্র সেন,  মাতা – চন্দ্রমুখী দেবী।( সমর সেনের বাবা ও মায়ের ঘটকালি করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) নিজের জন্ম নিয়ে সমরসেনের কবিতা টি বেশ: শুনেছি পঞ্জিকা মতে শুভক্ষণে জন্ম অভাগার সে লগ্নে গৃধিনী মুখে বাজেনি অশুভ চিৎকার কিম্বা অদৃষ্টের ব্যাঙ্গে অতি ধূর্ত কাক সহসা কর্কশ ডাকে ভাঙেনিকো জননীর প্রসব আবেশ। সপ্তম সন্তান আমি ---গৃহস্থবিলাপ –এক/তিন

আরাকান রাজসভার গোপন ইতিহাস (দৌলত কাজী, সৈয়দ আলাওল)

প্রথমেই আসি আরাকান রাজসভার আলোচনায়। আরাকানের অধিবাসীদের "মগ" বা "মঘ" বলা হয়। যেহেতু এদের পূর্বসূরীরা "মগধ" থেকে এসেছিলেন,তাই তাদের মগ বলা হয়। একটা রাজবংশ থেকে আসার জন্য অনেক সমালোচক রাজবংশীও বলে থাকেন। কিন্তু সবর্ত্র সন লেখার সময় "মঘী" সন লেখা হয়ে থাকে।তাই বাকি আলোচনাতে আমি(ইউসুফ মোল্লা) "মঘ" শব্দের ব্যবহার করাকে সমীচীন মনে করেছি।   আশ্চার্যের বিষয় যখন জ্ঞানদান, গোবিন্দ দাস, নরহরি সরকার,যদুনন্দন দাস,প্রেমদাস,কবিশেখর প্রভৃতি খ্যাতনামা কবিগণ দেবদেবীর বন্দনা ছাড়া অন্য কিছু রচনার কথা ভাবতে পারেন নি, তখন আরাকান রাজসভার মুসলমান কবিদের হাতে প্রথম দেবদেবী ছেড়ে মানুষের কথা উঠে এলো। যার ফলস্বরূপ বাংলা ভাষা নতুন রূপ ও নবীন প্রেরণা লাভ করলো।    সুলায়মান (৮৫১ খ্রিস্টাব্দে জীবিত),আবু জায়দুল হাসান,ইবনু খুরদবা(মৃত ৯১২ খ্রিস্টাব্দে),আল মাসূদী(মৃত ৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে),ইবনু হাওকল,আল ইদরিসী প্রভৃতি প্রাচীন আরব পরিব্রাজক ও ভৌগোলিকদের লিখিত বিবরণ থেকে জানা যায় যে, আরব বণিকরা বাণিজ্য করতে এসে "রামরী" দ্বীপে জাহাজ ভেঙে যাওয়ায় আশ্রয়