Skip to main content

জানা অজানা সমর সেন (সম্পূর্ণ)


সমর সেন
_ ✒কলমে- সুব্রত লাহা (এম. এ. বাংলা) 

বর্তমানে SRMS vidyapith-HS স্কুলের Group C পদে কর্মরত। 

শখ- নতুন নতুন তথ্য জানা ও সংগ্রহ করা। তাই নিজেকে "শখের পড়ুয়া" বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। 

বাস করেন- Bakshi



   ১৯১৬ খৃষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর কলকাতার বাগবাজারের বিশ্বকোষ লেনে(পৃথিবীতে বইয়ের নামে এই একটিই রাস্তা আছে, কারন এখানেই প্রাচ্যবিদ্যার্ণব নগেন্দ্রনাথ বসুর বাড়ি , ইনিই বিশ্বকোষের সংকলক।) সমর সেনের জন্ম। তিনি কালজয়ী দীনেশচন্দ্র সেনের পৌত্র। তাদের আদি নিবাস ছিল ঢাকার মানিকগঞ্জ থানার সুয়াপুর অঞ্চল। গৃহস্থবিলাপ কবিতায় কবি তার প্রপিতামহের পরিচিয় দিয়েছেন। এদের পূর্বপুরুষ ছিলেন পবনদূত কাব্যের ধোয়ী।

সমর সেনের পিতা – অরুনচন্দ্র সেন,

 মাতা – চন্দ্রমুখী দেবী।( সমর সেনের বাবা ও মায়ের ঘটকালি করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

নিজের জন্ম নিয়ে সমরসেনের কবিতা টি বেশ:

শুনেছি পঞ্জিকা মতে
শুভক্ষণে জন্ম অভাগার
সে লগ্নে গৃধিনী মুখে বাজেনি অশুভ চিৎকার
কিম্বা অদৃষ্টের ব্যাঙ্গে
অতি ধূর্ত কাক সহসা কর্কশ ডাকে
ভাঙেনিকো জননীর প্রসব আবেশ।
সপ্তম সন্তান আমি ---গৃহস্থবিলাপ –এক/তিনপুরুষ

সমর সেনের বাবা অরুনচন্দ্র সেন "অনাগত" নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন যার সম্পাদক ছিলেন রাধারমন মিত্র।

সমর সেনের প্রথম অনুবাদ – ভান লুনের Ancient Man

সমর সেনের প্রথম প্রকাশিত কবিতা – ‘তুমি ও আমি’ আন্তর্বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা ‘শ্রীহর্ষ’ তে ১৯৩৩ সালে প্রকাশিত হয়।
তবে কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্যের মতে ‘পূর্বাশা’ পত্রিকায় সমর সেনের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ।
বুদ্ধদেব বসুর ‘শাপভ্রষ্ট’ কবিতা টি সমর সেন অনুবাদ করেন ইংরেজিতে যেটি  বোম্বে থেকে প্রকাশিত ‘ওরিয়েন্ট’ পত্রিকায় মূদ্রিত হয়।
১৯৩৫ এ ‘কবিতা’ পত্রিকা প্রকাশিত হলে সমর সেন এর সহযোগী সম্পাদক নিযুক্ত হন। প্রতিভা বসুর সাক্ষ্য অনুযায়ী কবিতা র প্রথম সংখ্যাতে সমর সেনের চারটি কবিতা প্রকাশিত হয় – ‘Amor stands upon you’ , ‘মুক্তি’, ‘স্মৃতি’, ‘প্রেম’।
এই কবিতা প্রকাশের পরই রবীন্দ্রনাথ বুদ্ধদেব বসু কে লিখিত পত্রে কবির সাহিত্য জীবনের মূল্যায়ণ করে লেখেন
“ সমর সেনের কবিতা কয়টি তে গদ্যের রূঢ়তার ভিতর দিয়ে কাব্যের  লাবণ্য প্রকাশ পেয়েছে । সাহিত্যে এর লেখা ট্যাঁকসই হবে বলে বোধ হচ্ছে”।
১৯৩৬ খৃষ্টাব্দের ১লা ফেব্রুয়ারী Times Literary Supplement এর পাতায় ভারতীয় কবিতা নিয়ে এডোয়ার্ড টমসনের অস্বাক্ষরিত সম্পাদকীয় প্রবন্ধ ‘ A Land Made for Poetry : New India’s hopes and fear’  তে সমর সেনের দুটি কবিতার অনুবাদ প্রসঙ্গে আলোচনা করেন টমসন। কবির বয়স তখন মাত্র কুড়ি।
প্রণতি দে (বিষ্ণু দের স্ত্রী) র সাক্ষ্য অনুযায়ী সমর সেনের যে কোন বিষয় কে সংক্ষেপে জানার প্রবণতা ছিল, এই জন্য কবি বিষ্ণু দে সমর সেনের নাম দিয়ে ছিলেন ফুকফুক সেন ।
সমর সেন বি এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হয়েছিলেন , এবং তার যে স্বর্ণ পদক তিনি পেয়েছিলেন তা বিক্রী করেই তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ কয়েকটি কবিতা’(১৯৩৭) প্রকাশ করেন। কাব্যগ্রন্থ টি উৎসর্গ করেন মুজাফফর আহমেদ কে, বাংলা সাহিত্যে রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব কে কাব্য উৎসর্গের প্রথম নিদর্শন এটি। এই কাব্য গ্রন্থটির প্রথম সমালোচনা করেন ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ‘A Modern Poet but not progressive’ শিরোনামে Amrit Bazar Patrika, 13th june 1937 সংখ্যায়।
বুদ্ধদেব বসু ও এই কাব্য গ্রন্থটির সমালোচনা করেন কবিতা পত্রিকার আষঢ় ১৩৪৪ সংখ্যায় ‘নবযৌবনের কবিতা’ শিরোনামে । বিষ্ণু দে ‘কয়েকটি কবিতা’ র সমালোচনা প্রকাশ করেন পরিচয় পত্রিকার ১৩৪৪ ভাদ্র সংখ্যায়। ঢাকা থেকে প্রকাশিত শান্তি পত্রিকআর আশ্বিন ১৩৪৫ সংখ্যায় কিরন শঙ্কর সেনগুপ্ত ‘কয়েকটি কবিতা’র সমালোচনা প্রকাশ করেন।
সমর সেনের প্রথম প্রবন্ধ ‘উদার নীতিবাদ প্রসঙ্গে’প্রকাশিত হয় পরিচয় পত্রিকার ১৩৪৪ ভাদ্র সংখ্যায়।
বাংলা কবিতা সম্পর্কে তার প্রথম প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় কবিতা পত্রিকার তৃতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যায় ।
১৯৩৯ সালে ‘In Defence of the Decadents’ প্রবন্ধ টি Indian Progressive Writer Association এর তরফে New Indian literature এর দ্বিতীয় সংকলনে মুদ্রিত হয়।
সমর সেনের দ্বিতীয় কাব্য গ্রন্থ ‘গ্রহন’ প্রকাশিত হয় ১৯৪০ খৃষ্টাব্দে। উৎসর্গ করেন বুদ্ধদেব বসু , রাধারমণ মিত্র ও বিষ্ণু দে কে।
গ্রহন এর সমালোচনা
১) চতুরঙ্গ – চৈত্র ১৩৪৬ বঙ্গাব্দ- দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
২) কবিতা – কার্তিক, ১৩৪৭ - অমিয় চক্রবর্তী-‘ঝর্ণা ছন্দের কাব্য’ শিরোনামে।
১৯৪১ এর ২২ শে জুন হিটলার রাশিয়া আক্রমন করলে  বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে, এমনি এক প্রতিবাদ ঢাকার রাস্তায় মিছিলের রূপ নিলে আততায়ীদের হাতে নিহিত হন তরুন লেখক সোমেন চন্দ। এই সূত্রেই কবি সমর সেন লেখেন নববর্ষের প্রস্তাব কবিতা টি।
সারি সারি রক্তমুখে সৈন্য  চলে যমের দক্ষিণ দুয়ারে ,
দিন হতে দিনে , মৃত্যু হতে আর এক মৃত্যুতে একি যাত্রা।
১৯৪২ এ প্রকাশিত হয় তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘নানাকথা’ কবিতা ভবন থেকে। উৎসর্গ করেন বঙ্কিম,মুখোপাধ্যায় কে।
নানাকথা র সমালোচনা
১) কবিতা পত্রিকা- আশ্বিন ১৩৩৯- মনীন্দ্র রায়
২) পরিচয় পত্রিকা –ফাল্গুন ১৩৩৯ – ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
১৯৪৩ এ প্রকাশিত হয় চতুর্থ কাব্য গ্রন্থ ‘খোলা চিঠি’। প্রকাশক কবিতাভবন।
এক পয়সার একটি সিরিজের ১২ নং  বই খোলা চিঠি।
খোলা চিঠির সমালোচনা
১) চতুরঙ্গ পত্রিকা – পৌষ-১৩৫০- সুরেশ্চন্দ্র মৈত্র।
সমর সেনের সর্বশেষ কাব্য গ্রন্থ ‘তিন পুরুষ’ প্রকাশিত হয় ১৯৪৪ খৃষ্টাব্দে সংকেতভবন থেকে।
সমর সেনের শেষ কবিতা (এক হিসেবে) জন্মদিনে।
ভবলীলা সাঙ্গ হলে সবাই সমান
বিহারের হিন্দু আর নোয়াখালির মুসলমান
১৯৬৪, ৯ই অক্টোবর সমর সেনের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় NOW পত্রিকা টি। এটি সাপাহিক পত্রিকা ছিল । দাম ৩০ পয়সা।
১৯৬৮ ,১৬ই এপ্রিল সমর সেন Frontierপত্রিকা (সাপ্তাহিক) প্রকাশ করেন
১৯৭৮ এ প্রকাশিত হয় সমর সেনের আত্মকথা বাবুবৃত্তান্ত।এর ইংরেজি অনুবাদ করেন অশোক মিত্র । ১৯৮৫ তে The Telegraph পত্রিকায় এটি প্রকাশিত হয় । শিরোনাম – ‘A Babu’s Tale’
সমর সেনের শেষ প্রকাশিত কবিতা নিয়ে বিতর্ক আছে অনেকগুলি কবিতা কে সেই অভিধা দেওয়া হয়েছে।
১) গৌরকিশোর ঘোষের মতে ১৯৬২ সালে আনন্দবাজার পুজো সংখ্যায় প্রকাশিত ‘নতুন পাতা’ কবিতাটি সমর সেনের শেষ কবিতা (রচনাকাল ১৯৫৬) ।
২) বৃন্দাবন কর্মকারের মতে ১৯৬১ তে বেথুন কলেজ পত্রিকার জন্য মৃনালিনী এমার্সনের অনুরোধে লেখা ‘স্মৃতিতে’ কবিতা টি সমর সেনের রচিত শেষ কবিতা।
৩) ১৯৬৫ খৃষ্টাব্দে চতুরঙ্গ পত্রিকায় ছাপা ‘একটি অপ্রকাশিত কবিতা’ কে শেষ কবিতা বলে ধরা হয়।

Comments

Popular posts from this blog

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পূর্ণ তথ্য

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় 🍄 তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়🍄 ✒কলমেঃ ইউসুফ মোল্লা 🍁 জন্ম: ২৫ জুলাই, ১৮৯৮ (৮ শ্রাবণ, ১৩০৫ বঙ্গাব্দ) 🍁 জন্মস্থান: পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে। এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে। যদিও সেটা ক্ষয়িষ্ণু ছিল। পরে ১৯৪০ সালে তিনি ও তাঁর পরিবার নিয়ে কলকাতার বাগবাজারে চলে আসেন এবং ১৯৪১ সালে চলে যান বরানগরে। 🍁 পিতা: হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। (বাল্যকালে পিতৃবিয়োগ হলে তিনি মা ও বিধবা পিসির কাছে পালিত হয়)। 🍁 মাতা: প্রভাবতী দেবী 🍁পত্নী: উমাশশী দেবী (১৯১৬ সালে বিবাহ হয়) 🍁পিসিমা: শৈলজা দেবী(ধাত্রীদেবতা উপন্যাসে অমর হয়ে আছেন) 🍁মৃত্যু: ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ 🍁নামকরণের তাৎপর্য: লেখকের জন্মের আগেই তাঁর বড়োভাই মৃত্যুবরণ করেন। তাই, 'তারা' মায়ের পূজো করেন। সেই পূজোর ঠিক দশমাস পরেই জন্ম নিয়েছিলেন বলে মায়ের প্রতি সন্মান রেখে নামকরণ করা হয় তারাশঙ্কর। 🍁তারাশঙ্কর বিভ্রান্তি: 'শ্রীময়ী' উপন্যাসের জনকও শ্রীতারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও ইনি আমাদের আলোচিত তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় নন। তাই একই নামেই দুজন তারাশঙ্করের আবির্ভ

বনফুলের সম্পূর্ণ তথ্য

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (বনফুল)  - ইউসুফ মোল্লা( কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)  #জন্ম: ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জুলাই। #জন্মস্থান: বিহারের পূর্ণিয়া জেলার মণিহারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বনফুলের পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল হুগলি জেলার শিয়ালখালায়। #পিতা: সত্যচরণ মুখোপাধ্যায়। তিনি পূর্ণিয়া জেলার মণিহারী ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড হাসপাতালের ডাক্তার ছিলেন। #মাতা: মৃণালিনী দেবী। #ছোট ভাই: অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় #ভ্রাতুষ্পুত্র: অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় #স্ত্রী: লীলাবতী বন্দ্যোপাধ্যায়(মুখোপাধ্যায়) #সন্তান: #বড়োমেয়ে: কেয়া মুখোপাধ্যায় #বড় ছেলে: অসীম মুখোপাধ্যায় #ছোটছেলে: রঞ্জন মুখোপাধ্যায় #ছোটমেয়ে: করবী মুখোপাধ্যায় (স্বামী: কাজলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের) #মৃত্যু: ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ ফ্রেব্রুয়ারি কলকাতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। #ছদ্মনাম: বনফুল #সম্পাদনা:   ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত 'বিকাশ' নামে হাতে-লেখা একটি সাহিত্য পত্রিকা। #শিক্ষাজীবন:       তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় প্রথমে মণিহারী স্কুলে। পরে সাহেবগঞ্জ উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং এই স্কুল থেকে ১৯১৮ খ্রিষ

নবম শ্রেণীর উৎস সন্ধানে

∆সকল গল্প,কবিতা,নাটক,প্রবন্ধের উৎস নির্দেশ∆ #নবম_শ্রেণীর_সাহিত্যসঞ্চয়ন_সাহিত্যসম্ভার_ও_প্রফেসর_শঙ্কুর_ডায়রি **সাহিত্য সঞ্চয়ন নবম শ্রেণী** ১."কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি" কবি - মুকুন্দরাম চক্রবর্তী । উৎস : চন্ডীমঙ্গল কাব্যের আখেটিক খন্ড তথা কালকেতুর উপাখ্যান অন্তর্ভুক্ত "কলিঙ্গ দেশে ঝড়বৃষ্টি আরম্ভ"। ২."ধীবর বৃত্তান্ত" লেখক - কালিদাস । উৎস :অভিজ্ঞান শকুন্তলা নাটকের ষষ্ঠ অঙ্ক ।  তর্জমা : সত্যনারায়ণ চক্রবর্তী । ৩."ইলিয়াস" লেখক : লিও টলস্টয় উৎস : Twenty Three Tales (১৮৮৫) তর্জমা :মণীন্দ্র দত্ত । ৪."সাত ভাই চম্পা" কবি : বিষ্ণু দে । উৎস : সাত ভাই চম্পা । ৫."দাম" লেখক : নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় উৎস : ১৩৬৫ বঙ্গাব্দে শারদীয়া "তরুণের স্বপ্ন" তে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল । ৬."এই জীবন" কবি : সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় । উৎস : "দেখা হলো ভালোবাসা বেদনায়" । ৭."নব নব সৃষ্টি" লেখক : সৈয়দ মুজতবা আলী । উৎস : এটি "মাম্ দোর পুনর্জন্ম" প্রবন্ধের সম্পাদিত অংশ । মূল