Skip to main content

রুশ সাহিত্যের জন্ম ও তার উৎকর্ষতা

#প্রবন্ধ

রুশ সাহিত্যের জন্ম ও তার উৎকর্ষতা
_ ইউসুফ মোল্লা

    ইতিহাস মানবসভ্যতাকে আরো সৃজনশীল করতে সাহায্য করে। ইতিহাসের মধ্যে আমরা আমাদের শিকড়কে খুঁজে পাবো। আর যে সমাজ বা ব্যক্তি তার শিকড়কে ভুলে যায়, সে আর যাইহোক উন্নত হতে পারে না। আমাদেরকে আরো উন্নত হতে সাহায্য করে এই ইতিহাস । কারণ ইতিহাস থেকে নানা ভুল ত্রুটির শিক্ষা নিয়ে সেগুলো শুধরে নিয়ে থাকি, ফলে নান্দনিক সমাজ গড়ে ওঠে।

   সেইরকম এক ইতিহাসের পাতায় পদচারণা করবো আজ। বিশ্বের সবচেয়ে পড়ুয়া জাতি নামে পরিচিত সেই সংস্কৃতিকে জানার চেষ্টা করবো। প্রথমেই জানবো সেই সংস্কৃতি কোথা থেকে এসেছে। ইন্দো-ইরোরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এই রুশ ভাষা। প্রাচীন পূর্ব স্লাভিক (প্রাচীন রুশ) ভাষার লিখিত কাগজপত্র পাওয়া যায় দশম শতাব্দীর পর থেকে।

   প্রামাণ্য দলিল হিসেবে রুশ সাহিত্যের ইতিহাসের পথচলা শুরু হয় দশম শতাব্দী থেকে কিন্তু তা তখন পরিপুষ্ট ছিল না। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মিখাইল লোমোনোসোভ ও দেনিস ফনভিজিনের রচনার মধ্য দিয়ে তা বিকাশ লাভ করতে শুরু করে এবং ঊনিশ শতাব্দী থেকে আধুনিক ধ্যান ধারণার জন্ম হলে কিছু সেরা লেখকদের আবির্ভাব ঘটে। যার ফলে রুশ সাহিত্যের স্বর্ণ যুগ শুরু হয়, আর সেটা আলেক্সান্ডার পুশকিনের হাত ধরে সম্ভব হয়। অনেকে পুসকিনকে আধুনিক রুশ সাহিত্যের স্থপতি হিসেবে চেনেন। তাঁকে 'রুশ শেকসপিয়র' বা 'রুশ গ্যেটে'ও বলা হয়ে থাকে।

   খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার প্রসারের সাথে সাথে দশম শতাব্দীর শেষের দিকে রাশিয়াতে লিখিত ভাষার প্রচলন শুরু হয়। ধর্মীয় সাহিত্যের ভাষা হিসেবে গির্জায় স্লাভীয় ভাষার প্রচলন শুরু হয়। এই সময় বেশিরভাগ সাহিত্য ছিল ধর্ম কেন্দ্রীক। গির্জার নানেরা বাইবেলের অনুবাদ, সাধুসন্ততিদের জীবনকাহিনি প্রভৃতি রচনা করতেন। এছাড়াও টুকটাক দেখতে পাওয়া যায় আইনের প্রয়োজনে আইনকানুন, দলিল, বিভিন্ন চুক্তিপত্র ইত্যাদিও রচিত হতো। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় সেইসময় সাধু এবং চলিত- দুটি ভাষায় সাহিত্য রচিত হতো।

    সম্রাট মহান পিওতর এসে রাশিয়ার আধুনিকীকরণ ও ধর্মনিরপেক্ষীকরণ করেন ১৮ শতকে। ১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দে রুশ বহুশাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত লোমোনোসোভ তাঁর রুশ ব্যাকরণ বইতে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ভাষারীতির তত্ত্ব প্রদান করেন। এই তত্ত্বের ভিত্তিতে রুশ ভাষায় একটি উচ্চ রীতি থাকবে, যাতে ধর্মীয় রচনাবলী ও উচ্চস্তরের কাব্য রচিত হবে। একটি মধ্য রীতি, যাতে ছন্দ-কবিতা, সাহিত্যিক গদ্য ও বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র লেখা হবে। আর থাকবে নিম্ন রীতি, যা প্রায় সম্পূর্ণরূপে পূর্ব স্লাভীয় ভাষা; এই রীতিতে ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং লঘু নাটক রচিত হবে। আধুনিক আদর্শ রুশ ভাষার সাথে মধ্য রীতির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও ১৯ শতকের শুরুর দিকে বিখ্যাত রুশ লেখক পুশকিনের সময়ে আধুনিক আদর্শ রুশ ভাষার আবির্ভাব ও প্রতিষ্ঠা ঘটে।

    রুশ ভাষার ধ্বনিগত পরিবর্তন জানা খুব প্রয়োজন। শ্বাসাঘাতহীন o (ও)-কে a (আ) হিসেবে উচ্চারণ করা শুরু হয় (যেমন doma ("বাড়িগুলি")-কে দোমা-র পরিবর্তে দামা উচ্চারণ করা)। এই পরিবর্তনটি (যার নাম দেওয়া হয়েছে "আকানিয়ে") প্রথমে দক্ষিণ রাশিয়ায় শুরু হয় এবং পরবর্তীতে মধ্য রাশিয়ার কিছু অঞ্চলেও প্রচলিত হয়ে যায়। উত্তর রাশিয়ার ভাষাতে এই পরিবর্তনটি ঘটেনি (এর নাম দেওয়া হয়েছে "ওকানিয়ে")। পঞ্চদশ শতকে তাতারদের বিরুদ্ধে রুশদের সংগ্রামে ও পরবর্তীতে একতাবদ্ধ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়ার আবির্ভাবে মস্কো অঞ্চল প্রধান ভূমিকা পালন করে। মস্কো ছিল একটি আকানিয়ে এলাকা, এবং এখানকার ভাষায় উত্তর ও দক্ষিণ উপভাষা অঞ্চলের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সম্মিলন ঘটেছিল। ফলে মস্কো ও এর আশেপাশে একটি মধ্যবর্তী ঔপভাষিক এলাকার সৃষ্টি হয়। এই মধ্য রুশ উপভাষাটিই পরে আদর্শ আধুনিক রুশ ভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক ভিত্তি গড়ে দেয়। রুশ লিপিতে আকানিয়ে আলাদাভাবে বোঝানো হয় না, কিন্তু মস্কোর কথ্য ভাষাতে ব্যবহারের সুবাদে আধুনিক আদর্শ রুশ উচ্চারণের এটি একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। রুশ ভাষা একটি বিশাল এলাকা জুড়ে প্রচলিত হলেও ঔপভাষিক বৈচিত্র‌্য খুবই কম, এবং শিক্ষার বিস্তারের সাথে সাথে এই পার্থক্য আরও হ্রাস পাচ্ছে।

     রুশ সাহিত্যে পাঁচ পাঁচজন নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিককে পাওয়া যায়। ফলে বিংশ শতাব্দীতে এসে রুশ ভাষা রাশিয়ার সীমানা ছাড়িয়ে অন্য বহু দেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমস্ত অ-রুশ প্রজাতন্ত্রে রুশ ভাষাই ছিল মূল সরকারী বা প্রাতিষ্ঠানিক ভাষা। দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে রুশ ভাষায় কথা বলতে পারেন, এরকম লোকের সংখ্যা বিশাল। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার সময় অন্য আরও পাঁচটি ভাষার সাথে রুশ ভাষাও একটি দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে মর্যাদা পায়।

তথ্যঋণ:
1) Russian Language and Literature.
2) The New York Times
3) টেমপ্লেট: ইউরোপীয় সাহিত্য

Comments

  1. আমাদের ব্লগের গবেষণাধর্মী প্রবন্ধগুলি কেমন লাগছে কমেন্ট করে জানাবেন!

    ReplyDelete
    Replies
    1. আজই প্রথম আপনার ব্লগ পড়ছি । সমর সেন সম্পর্কে জানতে পারলাম । সুশান্ত কুমার কুন্ডু ।

      Delete

Post a Comment

Popular posts from this blog

লীলা মজুমদারের সম্পূর্ণ তথ্য

 লীলা মজুমদার - ইউসুফ   মোল্লা #আজ_সকাল_সকাল_চলে_এসেছি #লীলা_মজুমদার_নিয়ে  (ফেব্রুয়ারি ২৬, ১৯০৮ - এপ্রিল ৫, ২০০৭)         আমাদের দেশে ‘শতায়ু হও’ বলে আশীর্বাদ করা হয়ে থাকে। বাঙ্গালী লেখক-লেখিকাদের মধ্যে মাত্র দুজন এই একশ বছরের আয়ু স্পর্শ করেছেন বা স্পর্শ করার কাছাকাছি জায়গায় পৌঁছেছিলেন। তাঁরা হলেন - নীরদ চন্দ্র চৌধুরী এবং লীলা মজুমদার। তবে শত বর্ষের কাছাকাছি আয়ুতে পৌঁছালে অনেক ক্ষেত্রেই সুখের চেয়ে দুঃখ বেদনাই বেশী থাকে। নীরদ চন্দ্র চৌধুরী প্রায় পুরো সময়টাকেই লেখা পড়ার কাজে লাগিয়েছিলেন। লীলা মজুমদার শেষের প্রায় এক দশক বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। কিন্তু লীলা মজুমদার নিজের কর্মজীবনে এমন কিছু কালজয়ী সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন তা তাকে বাংলা সাহিত্যে অমর করে রেখেছে। বিশেষতঃ শিশু সাহিত্যে লীলা মজুমদার একটি অপ্রতিদ্বন্দী নাম। এখানে লীলা মজুমদারের পূর্ণাঙ্গ জীবন , তাঁর সাহিত্য কর্মগুলির আলোচনার সাথে সাথে তাঁর রচনা বৈশিষ্ট্য ও বর্তমান প্রজন্মে তাঁর প্রাসঙ্গিকতা ইত্যাদি বিষয়গুলির প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে।  ১৯০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ...

আশাপূর্ণা দেবীর সম্পূর্ণ তথ্য

আ শাপূর্ণা দেবী - ইউসুফ মোল্লা   #কথা_মতো_ভোর_ভোর_চলে_এসেছি #আশাপূর্ণা_দেবীকে_নিয়ে #জন্ম : ৮ ই জানুয়ারি ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর কলকাতায় মাতুলালয়ে। #পিতা : হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত। #মাতা : সরলাসুন্দরী দেবী। #আদি_নিবাস : হুগলি জেলার বেগমপুর। #জীবনসঙ্গী : কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা কালিদাস সেনগুপ্তের সঙ্গে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ১৫ বছর ৮ মাস বয়সে আশাপূর্ণা দেবীর বিবাহ হয়। #মৃত্যু : ১৩ ই জুলাই ১৯৯৫।         ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ১৩ বছর বয়সে ‘শিশুসাথী’ পত্রিকায় তাঁর প্রথম কবিতা “বাইরের ডাক” প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমে তিনি সাহিত্য জগতে আত্মপ্রকাশ করেন।        বড়োদের জন্য লেখা তাঁর প্রথম ছোটগল্প  “পত্নী ও প্রেয়সী”। এই ছোটগল্পটি ১৩৪৩ বঙ্গাব্দে শারদীয়া "আনন্দবাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত হয়।       আশাপূর্ণা দেবীর প্রথম প্রকাশিত ছোটগল্প "পাশাপাশি"।    ছোটদের জন্য লেখা তাঁর প্রথম ছোটগল্প সংকলন - “ছোট ঠাকুরদার কাশী যাত্রা” ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়।     বড়োদের জন্য লেখা প্রথম প্রকাশি...

🌸দশম শ্রেণীর উৎস সন্ধানে🌸

🕸দশম শ্রেণীর সাহিত্য সঞ্চয়ন,সাহিত্য সম্ভার ও কোনির সকল গ্রন্থের উৎস🕸 **সাহিত্য সঞ্চয়ন (দশম শ্রেণি)** ১)"শাবলতলার মাঠ" লেখক: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় । উৎস: বিভূতি রচনাবলী অষ্টম খন্ড । ২)"তিন পাহাড়ের কোলে" কবি: শক্তি চট্টোপাধ্যায় । উৎস: "অগ্রন্থিত পদ্য" (বাজার চলতি বই-এ লেখা "হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান") ৩)"জ্ঞানচক্ষু" লেখিকা : আশাপূর্ণা দেবী । উৎস : কুমকুম গল্প সংকলন। ৪)"বুধুয়ার পাখি" কবি : আলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত । উৎস : যৌবন বাউল । ৫)"অসুখী একজন" কবি :পাবলো নেরুদা । উৎস :বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে ।(পাবলো নেরুদার "Extravagaria" কাব্যের “La Desdichada”কবিতাটি নবারুণ ভট্টাচার্য "অসুখী একজন" নামে অনুবাদ করেন এবং অনূদিত " বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে" গ্রন্থে অন্তর্ভূক্ত হয়)। তরজমা : নবারুণ ভট্টাচার্য । ৬)"আমাকে দেখুন" লেখক :শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় । উৎস :'শ্রেষ্ঠ গল্পসংকলন'। পরে "শীর্ষেন্দুর সেরা ১০১" অন্তর্ভুক্ত হয়। ৭)"আয়...